BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Monday, May 6, 2013

সারদা মামালায় সিবিআই রুখতে ঘুঁটি সাজাচ্ছে রাজ্য!সারদা বিপর্যয় ---ক্ষীর খেয়েছে সবাই, খাইয়েছেন সুদীপ্ত সেন!সারদা: প্রশ্নের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি,সেন স্যারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন দেবযানী!কলকাতা ছাড়ার সময় সুদীপ্তর সঙ্গে ছিলেন ঐন্দ্রিলা! সিবিআই তদন্ত শুনেই আক্রমণাত্মক পার্থ, চান মহাশ্বেতা! পুলিসের আপত্তি সত্ত্বেও সিপিআইএমের সভা শ্যামবাজারেই!ভুয়ো জমিতেই বাজিমাত সারদার!সুদীপ্তর প্রমীলা-প্রীতি!লগ্নি সংস্থার মালিকের রহস্যমৃত্যু!হিসেব বোঝার সময় আসছে: বুদ্ধ,গণেশকে বলির পাঁঠা করে কি বাকি নেতাদের ছাড়েরই ব্যবস্থা সিপিএমে! পুলিসী তল্লাশির আগেই সম্পত্তি পাচার করলো সেই বুম্বা!

সারদা মামালায় সিবিআই রুখতে ঘুঁটি সাজাচ্ছে রাজ্য!সারদা বিপর্যয় ---ক্ষীর খেয়েছে সবাই, খাইয়েছেন সুদীপ্ত সেন!সারদা: প্রশ্নের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি,সেন স্যারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন দেবযানী!কলকাতা ছাড়ার সময় সুদীপ্তর সঙ্গে ছিলেন ঐন্দ্রিলা! সিবিআই তদন্ত শুনেই আক্রমণাত্মক পার্থ, চান মহাশ্বেতা! পুলিসের আপত্তি সত্ত্বেও সিপিআইএমের সভা শ্যামবাজারেই!ভুয়ো জমিতেই বাজিমাত সারদার!সুদীপ্তর প্রমীলা-প্রীতি!লগ্নি সংস্থার মালিকের রহস্যমৃত্যু!হিসেব বোঝার সময় আসছে: বুদ্ধ,গণেশকে বলির পাঁঠা করে কি বাকি নেতাদের ছাড়েরই ব্যবস্থা সিপিএমে!

পুলিসী তল্লাশির আগেই সম্পত্তি 
পাচার করলো সেই বুম্বা!



এই সময়: সিবিআইকে রুখতে মরিয়া রাজ্য সরকার৷ সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের দাবি শক্তিশালী হয়ে উঠছে বুঝেই কোমর বেঁধে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতায় নামতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ সারদা কেলেঙ্কারি-সহ বেআইনি আর্থিক সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত হবে কি না, তা এখনও আদালতের বিচারাধীন৷ এ নিয়ে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে৷ শুক্রবার রাজ্য সরকার হলফনামা পেশ করে বলেছে, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যের বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল৷ তাই সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন নেই৷ যদিও সেদিনই সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁরা এ রাজ্যের বেআইনি আর্থিক লগ্নিকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে প্রস্ত্তত৷ এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত সিবিআইকে রুখে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তভার নিজেদের হাতে রাখতে পারে কি না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷

সরকারি সূত্রের খবর, সারদা কেলেঙ্কারিতে তদন্ত যে জোর গতিতে এগোচ্ছে, সে কথাই আরও জোরালো ভাবে দাবি করে সিবিআইকে ঠেকাতে চাইছে রাজ্য সরকার৷ রবিবার সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যের বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তদন্তে শুধু ১ মে-র পর থেকেই এখন পর্যন্ত পুলিশ ১৮ জনকে গ্রেন্তার করেছে৷ এখন পর্যন্ত ১২টি এই ধরনের সংস্থার দন্তরে হানা দেওয়া হয়েছে৷ বাজেয়ান্ত করা হয়েছে অনেক সম্পত্তিও৷ এর মধ্য দিয়ে তদন্তে সরকারের সদিচ্ছাই প্রমাণিত হয়৷ সুদীন্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে গ্রেন্তার এবং তাদের জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দারা ইতিমধ্যে এক ডজন লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন৷ সেই তালিকায় শাসকদলের সাংসদও আছেন৷

এর পাশাপাশি সিবিআই সম্পর্কে গত সন্তাহে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যকেও হাতিয়ার করতে চলেছে রাজ্য সরকার৷ সর্বোচ্চ আদালত সিবিআইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে৷ রাজ্য সরকারের কৌঁসুলিদের বক্তব্য, বেআইনি আর্থিক সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তকেও শেষ পর্যন্ত সিবিআই যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়? শনিবার পানিহাটির সভাতেও মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন, সিবিআইকে দিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার৷

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তে ব্যর্থতার খতিয়ানও তৈরি করছে রাজ্য সরকার৷ নন্দীগ্রাম, ছোট আঙারিয়া, তাপসী মালিক, নোবেল চুরি, নেতাইয়ে গণহত্যার মতো মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের 'ব্যর্থতা'কে হাতিয়ার করেই সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত নিজেদের হাতেই রাখতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুধু এ রাজ্যেই নয়, ভিনরাজ্যের বড় বড় ঘটনার তদন্তে নেমে সিবিআই শেষ পর্যন্ত হালে পানি পায়নি বলেই অভিযোগ রাজ্য সরকারের৷ হাওলা এবং বোর্ফস কেলেঙ্কারির দোষীদের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিট আদালতে ধোপে টেকেনি৷ সিবিআই যে আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতের পুতুল ছাড়া আর কিছু না, সেটাই আদালতে তুলে ধরতে চাইছে রাজ্য সরকার৷

সারদা বিপর্যয় ---ক্ষীর খেয়েছে সবাই, খাইয়েছেন সুদীপ্ত সেন


সারদা বিপর্যয় ---ক্ষীর খেয়েছে সবাই, খাইয়েছেন সুদীপ্ত সেন

বশিষ্ঠ বসু

বিপাকে পড়লে বাঘেও ধান খায়৷ কথাটা কেন জানিনা বারবার মনে পড়ছে গত কয়েকদিন ধরে৷ আরও দু'একটা প্রবাদ বাক্যও উঁকি -ঝুঁকি মারছে মনের আনাচে কানাচে৷ যেমন, 'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে' বা 'বজ্র আঁটুনি, ফসকা গেরো'৷ ভারতবর্ষের যাবতীয় কেলেঙ্কারি এই তিনটির যে কোনও একটি ফার্মুলায় ঠিক ফিট করে যাবেই৷ আইন-কানুন, মন্ত্রী-আমলা, লস্কর-পেয়াদা, পুলিশ-মিলিটারি, সব আছে৷ তবুও, কোন ফাঁক-ফোকর দিয়ে ঘটে যায় মসনদ নাড়ানোর
মতো সব কেলেঙ্কারিয়াস ঘটনা৷ ২০১২তে কয়লা খনি, কর্নাটকে ওয়াকফ্ বোর্ডের জমি, ১৯৮১র এ আর আন্ত্তলের সিমেন্ট কেলেঙ্কারি, ১৯৯২তে হর্ষদ মেহেতার শেয়ার কেলেঙ্কারি, ১৯৯৪তে চিনি আমদানি, ১৯৯৬তে সি আর বানসালি, ২০০০-এ ইউনিট ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া, ২০০৫ -এ বিহার বন্যাত্রাণ, ২০০৯-এ মধু খোড়া খনি কেলেঙ্কারি, ২০১০-এ আইপিএল, টু-জি স্পেকট্রাম ...এরকম কত কী! কাজেই ২০১৩তে যে সারদা কেলেঙ্কারি হবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই৷ এখন কত কী হবে -ধরপাকড়, জবানবন্দী, বেরবে কত কী চিঠি -চাপাটি৷ বোল পাল্টে ভিজে বেড়ালের মতো এখন কত ডাকসাইটে লোকজনও মিয়াও-মিয়াও করবে৷ এখন সব ভোল পাল্টে ফেলবে রাতারাতি৷ কেউ স্বেচ্ছায় হিন্দি সিনেমার বিখ্যাত ভাষায় 'সরকারি গাওয়া' বনে যাবে অর্থাত্‍ রাজসাক্ষী, কপ্পুরের মতো উবে যাবে এতদিন ধরে পিছনে যারা মদত দিয়ে আসছিল৷ এইসব কতবারই তো দেখা, নতুন আর কী! তবে হ্যাঁ, প্রতিবারের মতোই প্রশ্ন তো মনে জাগেই৷
এবারও জাগছে৷ অনেক প্রশ্ন৷ একে একে বলি৷

১) সারদা গোষ্ঠী, তথা তামাম চিটফান্ড সম্প্রদায়ের এতদিনের রমরমা ব্যবসা কি প্রাক্তণ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের বা বর্তমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কোনোওই উপকারে লাগেনি? এই যে সরকার দাবি করে হাজার হাজার চাকরি হচ্ছে, শ'য়ে শ'য়ে প্রকল্প গড়ে উঠছে -এই দাবিগুলির সঙ্গে কি চিটফান্ডগুলির কোনও লেনদেন নেই? বড় একটিও শিল্পগোষ্ঠী তো এখনও বাংলায় আসেননি৷ তাহলে চাকরিগুলি হচ্ছে কোথায়? প্রকল্পগুলি কী এবং কারা সেগুলি তৈরি করছে? বাংলায় যে সব নামিদামি শিল্পগোষ্ঠী আছে, তারা তো বাংলায় নতুন কিছু বিশেষ গড়ছে না, ভিন রাজ্যে বিনিয়োগ করার চেষ্টায় আছে৷ তাহলে, এখানে প্রকল্প করছে কারা?
২) প্রতিটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল গত কয়েক বছর ধরে দেখায় নানান বিজ্ঞাপন-গুচ্ছের আবাসন, বেসরকারি কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, হোটেল, ব্যাটারি,
ইনভার্টার, রেসর্ট, রান্নার মশলা, মিনারেল ওয়াটার কারখানা, সিমেন্ট কারখানা, এরকম কত কী প্রকল্প৷ প্রতি বছর যেন এদের সংখ্যা বাড়ে৷ এদের অনেকেরই
সঙ্গে যুক্ত থাকে সারদার মতো কোনও না কোনও কোম্পানির নাম৷ এগুলি কি রাজনৈতিক মদত ছাড়াই উঠেছে?
৩) ঠিক তেমনি দেখা যায় অসংখ্য বাংলা ও ইংরাজি খবরের কাগজ৷ সব বিগত কয়েক বছরের মধ্যে হয়েছে৷ এতো কাগজ পড়ে কে, করল কারা, চলে কিসের
জোরে?
৪) সারদা গোষ্ঠীর এজেন্টদের সংখ্যা এতো বেহিসেবি ধরণের বাড়ল কেন হঠাত্‍ ? এই বাড়তি এজেন্টরা কারা?
৫) কালেকশনের হার হঠাত্ ঝুলে গেল কেন? বড় জাহাজ ডুবতে তো সময় লাগে কিন্তু যে ব্যবসা রমরম করে চলছিল, সেই ব্যবসা হঠাত্‍ হুড়মুড় করে মুখ
থুবড়ে পড়ল কেন?
৬) মমতা কেন অস্বস্তিতে আছেন?
৭) সিপিএম লাফাচ্ছে কেন? বোমাটা ফেটেছে মমতার আমলে শুধু সেই আনন্দে কি? চিটফান্ডগুলির বেশিরভাগই তো ব্যবসা শুরু করেছিল লাল ঝাণ্ডার জমানায়৷
প্রাথমিক হাত ধরার কাজটি তে সিপিএমেরই কিছু স্বনামধন্য নেতারা করেছিলেন, তাই নয় কি?
৮) চিটফান্ড বা পনজি প্রকল্পগুলি ঠিক কী ভাবে লোক ঠকায়, তা তো কেন্দ্রীয় সরকারের অজানা নয়৷ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকই হোক বা সেবি, যথাযথ দেশব্যাপী
প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেয়নি কেন বহু আগে থেকে? বিধ্বংসী বোমা ফাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল কেন?
৯) সারদা গোষ্ঠীর কলঙ্কিত তারকারা তৃণমূল কংগ্রেসের হোমরাচোমড়াদের সঙ্গে এত খোলামেলা মেলামেশা করতে পারল কী করে এতদিন ধরে? মুখ্যমন্ত্রী কি
জানতেন না যে এরা চিটফান্ড চালায়? লোক লাগিয়েছিলেন কি একটু আধটু খোঁজ নিতে যে এই সংস্থাগুলি ঠিকঠাক টাকা ফেরত দিচ্ছে কিনা? না কি কিছুদিনের
জন্য ভুলে গেছিলেন সঞ্চয়িতার ইতিহাস? রাজনৈতিক চাপান-উতোরের খেলায় এই দেশে নানা জিনিসই হয়৷ বোধকরি সারদাও তেমনি একটি কেস৷ সারদার
ওয়েবসাইটেই তো লেখা আছে: 'দ্য জার্নি বিগ্যান ১২ ইয়ার্স এগো ...'৷ সেই তো লাল-কেল্লা দাঁড়িয়ে ছিল যখন শক্ত, মজবুত হয়ে, তখন! শুরু হয়েছিল হয়ত
একক প্রচেষ্টায়, বা দু'-চারজন বন্ধুবান্ধব মিলে৷ তারপর আস্তে আস্তে শ্রীবৃদ্ধি হতেই, বাড়ির পুজো হয়ে উঠল বারোয়ারি গাজন৷ আর সত্যি কথা বলতে কি,
খুঁটির জোর আছে যার সেই তো বুক ফুলিয়ে চলবে৷ সুদীপ্ত সেন ও চলত৷ চলবেই৷ চলতে দেওয়া হয়েছে, তাই চলছে! কারণ, ক্ষীর খেয়েছে তো সবাই, খাইয়েছে
সুদীপ্ত৷

আজকে অগুনতি সাধারণ মানুষ যারা কাঁদছে, তারা চিরকালই কাঁদে একটু বাড়তি লোভ করতে গিয়ে৷ নাহলে যে রাজ্যে সঞ্চয়িতা নামক একটি ইতিহাস হয়ে
গেছে, সেই রাজ্যের মানুষ আবার একই ভুল বারবার করে কেন? কিন্তু লোভই কি একমাত্র কারণ এই করুণ পরিণতির জন্য? দীর্ঘদিনের বন্ধু অজিতবাবু মনে
করেন তা নয়৷ কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলেন, 'আপনার-আমার মতো লোকেদের কথা বাদ দিন৷ আরও নিচের স্তরের মানুষজন কে ধরুন৷ বলুন তো এদের
মধ্যে কেওয়াইসি ফর্ম কতজন বুঝবে? সরকারি কোনও জায়গাতেই আজকে কোনও সঞ্চয় করতে গেলে এই কেওয়াইসির জ্বালায় উত্যক্ত হয়ে উঠেছে মানুষ৷ ছবি
দাও, প্যান কার্ড দাও, ভোটার কার্ড দাও, বাপের নাম দাও, চোদ্দগুষ্টির ঠিকুজি-কুষ্ঠি দাও, এ কি মামার বাড়ি? বাড়াবাড়ি করেনি কেন্দ্রীয় অর্থদপ্তর, রিজার্ভ
ব্যাঙ্ক, সেবি ...এরা? একটা জায়গায় চুরি থামাতে গিয়ে একশ ডাকাতির রাস্তা খুলে দিয়েছে না?'আরও বললেন: 'এই চিটফান্ডরা টাকা তুলেছে তো বটেই, কোটি
কোটি টাকা৷ পেল কোথা থেকে? সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই পেয়েছে৷ পেল কেন? আরে মশাই আমি নিজে দেখেছি রামপুরহাট, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল,
এমনকি পুরুলিয়া বা মেদিনীপুরেও লোকে তিতিবিরক্ত হয়ে সরকারি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলি থেকে টাকা তুলে ঢুকিয়েছে এইসব চিটফান্ডে৷ কেন দেবে না? কোনও
ঝঞ্ধাট নেই তো! এক এক জায়গায় এই চিটফান্ডগুলির এজেন্টরা সপ্তাহে ২০ -২৫ কোটি টাকা করে এক এক জন তুলেছে! সুদৃঢ় ক্ষুদ্র সঞ্চয় ব্যবস্থা থাকলে
এরকম হতো?' এক্কেবারে একমত বারুইপুরের ছোড়দা৷ 'গুরু শোনো, বারুইপুর, জয়নগর, মথুরাপুর, বকখালি, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, কুলতলি, ক্যানিং -য়ে সব জায়গায় ছিল সারদা, রোজ ভ্যালী ও অন্য চিটফান্ডদের স্বর্গরাজ্য৷ গত কিছু বছর ধরে বারুইপুর হয়ে উঠছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রধান কেন্দ্র, বিশাল
জনসংখ্যা ও ফল -সবজীর জন্য বিখ্যাত৷ লোকের হাতে কাঁচা পয়সা প্রচুর৷ আমাদের বাড়ির যে পরিচারিকা, সেও মাসে ১০০ টাকা করে চিটফান্ডে রাখত৷
চিটফান্ডগুলির এজেন্টরা সন্ধ্যেবেলা করে বাড়ি বাড়ি কালেকশন করে যেত৷ কোনও ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের কল্পনার বাইরে এই মার্কেটিং পরিষেবা৷'

'১৯৯২তে বারুইপুরে এক কাঠা জমির দাম ছিল চল্লিশ থেকে ষাট হাজার টাকা৷ আজকে আট থেকে দশ লাখ টাকা কাঠা৷ পৈতৃক সম্পত্তি যার ধরো দু'বিঘা
জমি আছে, সে চার কাঠা বিক্রি করে দিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা ঢুকিয়ে দিয়েছে চিটফান্ডে৷ আমাদের ওখানে বলে, ঢাক-ঢাক-জরির এমব্রয়ডারি কাজ৷ কত লোকজন
ওই ঢাক-ঢাকের কাজ করে আমতলা, বিষ্ণুপুর, ক্যানিং, ভাঙর ইত্যাদি জায়গায়৷ আবার বানতলার দিকে আছে চামড়ার ব্যবসা৷ এজেন্টরা প্রথমে এসে খোঁজ নিত
পাড়ায় পাড়ায় এমন কে কে আছে যাদের কথা আশেপাশের লোকজন শোনে৷ প্রথমে তাদের ধরত৷ তাদের মুখে মুখে খ্যাতি ছড়াল, ঢুকল বাকিরা৷ এইসব তো
চোখের ওপর দেখা,' বললেন ছোড়দা৷ বারুইপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও সংলগ্ন এলাকাতে দোকানদাররা দিনে ১০০ টাকা করে ঢেলে দিত চিটফান্ডে৷ বারুইপুর
প্ল্যাটফর্ম চত্বর থেকে এই এজেন্টদের নিতে দেখেছি দোকান পিছু ৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত৷

শুধু যে সারদা, রোজ ভ্যালীরা তা নয়৷ ছিল আরও কত, যেমন বিশাল, উড়ান গ্রুপ ইত্যাদি৷ ২০১১ পর্যন্ত খুব ভালো টাকা পেয়েছে লোকজন৷ মরেছে তারা
যাদের ২০১২-১৩তে টাকার রিপেমেন্ট হওয়ার কথা ছিল,' ছোড়দা জানালেন৷

এমনকি বর্ধমান-বাঁকুড়ার বর্ডার ঘেঁষে ইন্দাস, পাত্রসাঁই, সোনামুখী, খাতড়া, খন্ডঘোষ - এইসব জায়গা থেকেও দেদার 'কালেকশন' হয়েছে৷ কিন্তু ওই, অতি লোভে
তাঁতি নষ্ট বলে না, তাই হল৷

http://eisamay.indiatimes.com/articleshow/19909993.cms


পুলিসী তল্লাশির আগেই সম্পত্তি 
পাচার করলো সেই বুম্বা

নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ৫ই মে— শাসক-সারদা মাখামাখি ফের প্রকট। তাই রবিবার সারদা মালিক সুদীপ্ত সেন ঘনিষ্ঠ অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বার বাড়িতে পুলিসী তল্লাশি চালানোর ঠিক আগের মুহূর্তেই তৃণমূলী নেতা-কর্মীরা বস্তাভর্তি টাকা, জমির দলিল পাচার করে দিলো। আগেই ফেরার ছিলেন বারুইপুর এলাকায় সারদার মুখ্য এজেন্ট বুম্বা। 

দক্ষিণ ২৪পরগনা জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার কঙ্কর প্রসাদ বারুইয়ের নেতৃত্বে এদিন পুলিস বাহিনী হানা দেয় বারুইপুরের ফুলতলায় অরিন্দম দাসের বাড়িতে। সবকিছু নিয়ে চম্পট দিলেও এদিন ছিটেফোঁটা জমির দলিল এবং একটি কম্পিউটার উদ্ধার করেছে পুলিস। পুলিসের উদ্ধার করা এই জমির কাগজপত্রের মধ্যেই বারুইপুরের বাইপাসে ১৮বিঘা জমির কাগজও রয়েছে যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। এই জমির মালিকানা রয়েছে অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বার নামে। বুম্বার স্ত্রী গীতা দাসের নামে বেশ কিছু জমির দলিল পাওয়া গেছে এবং ৬টি এল আই সি বীমার কাগজপত্র পাওয়া গেছে। পুলিস এদিন উদ্ধার করেছে সারদা গার্ডেনে ৪টি লরি, ২টি কম্পিউটার এবং কিছু কাগজপত্র। শুধু বুম্বা নয়, বুম্বা ঘনিষ্ঠ বিশ্বনাথ দাসের বাড়িতেও এদিন পুলিসী তল্লাশি চলেছে। সেখান থেকেও মিলেছে বেশকিছু জমির দলিল এবং ১০টি এল আই সি-র কাগজপত্র এবং তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ।

এদিকে রবিবার পুলিসী তল্লাশির আগেই কীভাবে খোঁজ পেয়ে টাকা ও দলিল পাচার হলো তা জানতেও পেরেছেন স্থানীয় মানুষ এবং আমানতকারীরাই। জানা গেছে, এদিন পুলিস আসার আগেই বুম্বার বাড়িতে যায় রামনগর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলী প্রধান দিলীপ বিশ্বাস (ওরফে বুড়ো)-এর ছেলে সুমন বিশ্বাস। শুধু সুমন বিশ্বাস নয়, বারুইপুরের ব্লক তৃণমূল সভাপতি শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী ওরফে কালুও এদিন পুলিসী তল্লাশির ঠিক আগেই যায় অরিন্দম দাসের বাড়িতে। গোড়া থেকেই এই শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী ছিল অরিন্দম দাসের ঘনিষ্ঠ। আর সুমন বিশ্বাসের বাবা তৃণমূলী প্রধান দিলীপ বিশ্বাসও জড়িয়ে ছিল সারদার প্রতিটি কর্মকাণ্ডে। দিলীপ বিশ্বাসের ছেলে সুমন বিশ্বাস সারদা ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস-এর কর্মী ছিল। তার মাসিক বেতন ছিল ৪৫হাজার টাকা। শুধু কি তাই? প্রতিবছর শারদোৎসবে ফুলতলার পুজোতে (যার উদ্যোক্তা তৃণমূলী নেতা দিলীপ বিশ্বাস) ১০-১২লক্ষ টাকা দিত অরিন্দম দাস। তাঁরাই বেশ কয়েকটা বস্তা নিয়ে পালিয়ে যান। শাসক সারদার অন্তরঙ্গতার আরও তথ্য দিয়েছেন স্থানীয় মানুষই। তাঁরাই জানিয়েছেন, বারুইপুর পৌরসভার তৃণমূলী ভাইস চেয়ারম্যান মুজফফর আহমদ নিয়মিত এই সারদা দপ্তরে বসে তৃণমূলের দলীয় সভা করতেন।

শুধু তৃণমূলী নেতা-কর্মীরাই নন, অরিন্দম দাসের সম্পত্তি পাচারের পিছনে পুলিসের ভূমিকাও কিছু কম নয়। স্থানীয় মানুষ অভিযোগে জানিয়েছেন, এদিন পুলিস যখন রেইড করতে যায় তার আগেই খোদ বারুইপুর থানার ওসি এই তল্লাশির খবর দিয়ে দেন বুম্বাকে। 

এদিকে ধীরে ধীরে সুদীপ্ত সেন ঘনিষ্ঠ অরিন্দম দাসের বিপুল সম্পত্তিরও হদিশ মিলছে। স্থানীয় মানুষ এবং সারদার এজেন্ট ও আমানতকারীরাই জানিয়েছেন, বারুইপাড়ায় সারদা গার্ডেনের বাগানবাড়ির মালিককে তাঁর বাড়ির জন্য ৬০লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। বারুইপুরের কৃষ্ণা সিনেমা হলটিও কেনা হয়েছিল ৫০লক্ষ টাকায়। এমনকি ফুলতলায় সারদা অ্যাগ্রো বিল্ডিং অরিন্দম দাসের নামেই কেনা রয়েছে। বিবেকানন্দ পল্লীর ঠিক উলটোদিকে অরিন্দম দাসের স্ত্রীর নামে সাড়ে তিন কাঠা জমি কেনা রয়েছে। বুম্বা এবং বুম্বার স্ত্রী ছাড়াও অরিন্দম দাস ঘনিষ্ঠ উত্তম মাইতিরও বিভিন্ন জায়গায় জমির খোঁজ মিলেছে। ফুলতলার মিলন মন্দির ক্লাবের উলটোদিকে সাড়ে ৫কাঠা জমি কিনে রাখা হয়েছে উত্তম মাইতির নামে। ফুলতলা টাওয়ারের পাশে উত্তম মাইতির নামে আরও সাড়ে তিন কাঠা জমি কিনে রাখা আছে।

কে ছিল এই অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বা? একসময় অটোচালক ছিল এই বুম্বা। তারপর ধীরে ধীরে তৃণমূলী সখ্যে সারদা চিট ফান্ড সংস্থার এরিয়া ম্যানেজার হয়ে ওঠে সে। তার হাত দিয়েই সারদা মালিক সুদীপ্ত সেন এই এলাকায় ১৩টি ব্র্যাঞ্চ খোলে। সারদা কাণ্ড ফাঁস হওয়ার পর এই এলাকার বহু আমানতকারী এজেন্ট অরিন্দম দাসের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এই আমানতকারীরাই জানাচ্ছেন অরিন্দম দাসের হাত দিয়েই এজেন্টরা মোট ৬০কোটি টাকা জমা করেছেন সারদা ফান্ডে। আর বুম্বার এই ফুলে ফেঁপে ওঠার পেছনে তৃণমূলী পরিচয়ই যে আসল কারণ তাও জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুষই।

এদিকে খোঁজ মিলছে চিট ফান্ডের লালন-পালনে নিযুক্ত কলকাতার তৃণমূলী কাউন্সিলরের পরিবারও। বাঁশদ্রোণীতে কলকাতা কর্পোরেশনের ১১৩নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলী কাউন্সিলর অনীতা কর মজুমদারের স্বামীও আর এক চিট ফান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন এখনও। স্থানীয় আমানতকারীরাই জানাচ্ছেন এই তৃণমূলী কাউন্সিলরের স্বামী রঞ্জন শীল দীর্ঘদিন ধরেই এম পি এস-এর চিট ফান্ড সাম্রাজ্য বাড়িয়ে চলেছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েই এই সংস্থার এজেন্ট হিসেবে তিনি যুক্ত করেছেন স্থানীয় বেশকিছু মানুষকে। এখন যাবতীয় চিট ফান্ড নিয়ে শোরগোল ওঠার পরপরই সব ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় নেমেছেন কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামী। আমানতকারীরা টাকা ফেরতের দাবি জানালে কাউন্সিলরের স্বামী জানাচ্ছেন তাঁর ১২কোটি টাকা রয়েছে, প্রয়োজনে তা থেকে ফেরত দেওয়া হবে। তবে কীভাবে একজন তৃণমূলী কাউন্সিলরের স্বামী ১২কোটি টাকার মালিক হলেন তা জানা যাচ্ছে না। এদিকে শনিবারই লেকটাউনে এম পি এস সংস্থার একটি দপ্তরে ক্ষুব্ধ আমানতকারীরা টাকা ফেরতের দাবি জানাতে গিয়ে ভাঙচুর করেছেন।

কলকাতা: সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  দাবি করেছেন, রাজ্যে লগ্নি সংস্থাগুলির কাজকর্ম নিয়ে আগে থেকে কিছুই জানা ছিল না তাঁর৷ কিন্তু তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে যেসব তথ্য সামনে এসেছে, তাতে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সেই দাবিই কার্যত প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷ 
শনিবারই রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডে জানান, রাজ্যে লগ্নি সংস্থার কারবার নিয়ে তিনি আগেই অর্থ দফতরকে জানিয়েছিলেন৷ নথি থেকে যে সত্যটা প্রকট হয়ে গিয়েছে, তা হল, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা লগ্নি সংস্থাগুলির রাশ টেনে ধরতে বছর দুয়েক আগে সরকারের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে চেয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ কিন্তু সরকারই তা প্রয়োগে কোনও আগ্রহ দেখায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে৷  কিন্তু কী সেই রক্ষা কবচ? 
আরবিআই আইনের ৪৫(টি) ধারা অনুযায়ী, কোনও সংস্থার টাকা তোলার বৈধ অনুমতি আছে কি না, তা যাচাই করতে কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করার অধিকার পাবেন থানার ওসিরা৷ আইনটি প্রয়োগ করার কথা জানিয়ে রাজ্য বিজ্ঞপ্তি জারি করলে আদালতের নির্দেশ নিয়ে যে কোনও সময় যে কোনও অর্থলগ্নি সংস্থার কাগজপত্র সিজ করতে পারবেন তাঁরা৷ নথিপত্রে বেআইনি কিছু মিললে থাকবে কড়া শাস্তির সংস্থান৷ 
আরবিআইয়ের এই উদ্বেগের কারণও ছিল সাধন পান্ডেরই চিঠি৷ ২০১১-র আগস্টের ওই চিঠিতে ১৫টি সংস্থার নাম করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে তিনি জানতে চান, সংস্থাগুলো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে ফেরত দিচ্ছে না৷ যেভাবে টাকা তোলা হচ্ছে, এভাবে সংস্থাগুলি টাকা তুলতে পারে কি? আরবিআইয়ের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা এ ব্যাপারে অনুরোধ করেছি৷ ২০১১-র আগস্ট থেকে মুখ্যসচিবকে একাধিক বার চিঠি দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ৪৫(টি) ধারাটি কার্যকর করা হয়নি৷ তত্কালীন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, এই কাজের নোডাল ডিপার্টমেন্ট অর্থ দফতর৷ বিষয়টি অবশ্যই ওদের জানানো হয়েছিল৷ তবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না, তা এখন মনে নেই৷
সরকারি নথিও কিন্তু অন্য কথা বলছে৷ মহাকরণ সূত্রে খবর,  লগ্নি সংস্থাগুলির বেআইনি কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে ২০১১-র আগস্ট থেকে ২০১২-র ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে মোট চারটি চিঠি পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে এটাও বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে এই বিষয়ে অবগত করতে হবে৷ মহাকরণ সূত্রের খবর, রাজ্য ওইসব চিঠির কোনও উত্তরই দেয়নি৷ তারা যে বারবার চিঠি দিয়েও সাড়া পাচ্ছে না, সেটাও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে মনে করিয়ে চিঠি আসে দিল্লি থেকে৷ কিন্তু তাতেও কোনও কাজই হয়নি বলে সূত্রের খবর৷  
২০১২-র ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজ্যকে একই বিষয়ে ফের চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷।সেই চিঠিতেও রাজ্যকে মন্ত্রকের পাঠানো আগের চিঠিগুলির কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়৷ তারপরও রাজ্যের তরফে কোনও সাড়া দেওয়া হয়নি বলে মহাকরণ সূত্রে খবর৷ রাজ্যকে যখন কেন্দ্রের তরফে ওই সমস্ত চিঠি পাঠানো হয়, তখন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম৷।এ প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি৷

এবিপি আনন্দ

সেন স্যারের বিরুদ্ধে এবার মুখ খুলতে শুরু করেছেন তাঁর সবসময়ের ছায়াসঙ্গী দেবযানী মুখোপাধ্যায়। যা আরও চাপে ফেলছে সারদা কর্তাকে। প্রথম দিকে পুলিসি জেরায় আতঙ্কিত দেবযানী এখন অনেকটাই চাপমুক্ত। কিন্তু সারদার সেকেন্ড ইন কমান্ডের এই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? তবে কি রাজসাক্ষী হওয়ার পথে দেবযানী?

বৈভব আর বিলাসবহুল জীবনের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। একসময়ে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটত সল্টলেকের ঝাঁ চকচকে, এসি লাগানো অফিসে। রাত কাটত বিলাসবহুল, সুসজ্জিত ফ্ল্যাটে। সর্বক্ষণ দামী শাড়ি আর বহুমূল্য প্রসাধনে সজ্জিত। সঙ্গে ম্যাচিং গয়না। চাইলেই হাজির দামী গাড়ি। নামী হোটেল থেকে খাবারের প্যাকেট। শপিং মলে গিয়ে দেদার কেনাকাটা। কিংবা আমানতকারীদের পয়সায় ইচ্ছেমত দানধ্যান। এই লাইফ স্টাইলেই অভ্যস্ত ছিলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়। সারদার সেকেন্ড ইন কমান্ড। 

কিন্তু সেখান থেকে আচমকা পতন। 

তাই নিউটাউন থানার লক আপে আর সাধারণ খাবার মুখে রুচছে না সারদার সেকেন্ড ইন কমান্ড দেবযানী মুখার্জির। শেষ পর্যন্ত তাঁর জন্য আলাদা করে স্যান্ডউইচের ব্যবস্থা করতে হল পুলিসকে। রবিবারের সন্ধেয় কিছুটা হলেও তা তৃপ্তি করে খেলেন দেবযানী। সন্ধেয় সুদীপ্ত, দেবযানীকে জেরা করতে নিউটাউন থানায় যান বিধাননগর পুলিসের কমিশনার রাজিব কুমার এবং গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ। গোয়েন্দা কর্তাদের কাছে থানার খাবারে নিজের আপত্তির কথা জানান দেবযানী। শেষমেশ তাঁর জন্য বাইরে থেকে আনানো হয় স্যান্ডউইচ। আনানো হয় মিনারেল ওয়াটার। আর থানার বিশেষ ঘরে বেশ গল্প করতে করতে একসঙ্গে চলে খাওয়া এবং জেরা, দুই পর্ব। 

কিন্তু নিজের হঠাত্‍ এই পতনটা মন থেকে একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না দেবযানী। জেরায় এখন তাই সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধেই বারবার আঙুল তুলেছেন সেন স্যারের সবসময়ের ছায়াসঙ্গী। 

সূত্রের খবর, একটানা পুলিসি জেরায় মানসিক ভাবে আরও ভেঙে পড়েছেন সুদীপ্ত সেন। গোয়্ন্দাদের কাছে জেরায় তাঁর হতাশা আরও বেশি করে প্রকট হয়েছে। জেরায় সারদার কর্ণধার বলেছেন, এতদিন যাঁদের তিনি হিতাকাঙ্খী বলে জানতেন, আজ তারাই ছুরি মারছে। এমনকি যাঁরা নিয়মিত টাকা নিয়েছেন, তাঁরাও এখন উল্টোসুর গাইছেন বলে অভিযোগ সুদীপ্ত সেনের। 

বছরের পর বছর তছরূপ করেছেন কোটি কোটি টাকা। উড়িয়েছেনও দেদার। ভরসা ছিল, শেষ পর্যন্ত হয়ত সঙ্গে পাবেন ছায়াসঙ্গীনিকে। কিন্তু দেবযানীর বয়ান তাঁর বিরুদ্ধে যাওয়ায় ক্রমশ চাপে সেন স্যার। পুলিসি জেরার মানসিকভাবে বিধ্বস্ত সারদা কেলেঙ্কারির নায়ক সুদীপ্ত সেন। কিন্তু একটানা পুলিসি জেরার চাপ কাটিয়ে সারদার সেকেন্ড ইন কমান্ডের এই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ? কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে এটা?  

http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/debjani-s-confession_13201.html

কলকাতা: সুদীপ্ত সেনের মহিলা-ঘনিষ্ঠতার কথা এখন আর অজানা নয়৷ অফিসে মহিলাদের ফ্লোরে একা সুদীপ্ত সেনের প্রবেশাধিকার, গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক, গাড়ির মতো দামি উপহারের গল্প রীতিমতো আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে৷ 
গত কয়েকদিন ধরেই সুদীপ্ত সেনকে দফায় দফায় জেরা করছেন গোয়েন্দারা৷ আর তাতেই উঠে এসেছে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ পুলিশ সূত্রে খবর, প্রায় এক দশক আগে সুদীপ্ত সেন যখন লগ্নি ব্যবসায় পা রাখেন, মহিলাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা তখন থেকেই৷ যতই ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে, ততই তা বেড়েছে৷ 
পুলিশ সূত্রে খবর, স্নাতকোত্তীর্ণ সুদীপ্ত সেন প্রথম জীবনে জড়িয়ে পড়েন নকশাল-সঙ্গে৷ সেই মর্মে কলকাতা পুলিশ এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলাও ছিল৷ পরে সেসব ছেড়ে শুরু করেন গৃহশিক্ষকতা৷ তারপর প্রোমোটিং৷ সেটা নব্বই সালের শুরুর দিক৷ এই সময়েই প্রথম বিয়ে করেন সুদীপ্ত৷ ছয়-সাত বছর পর দ্বিতীয় বিয়ে৷ তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ দাবি করেছে, ২০০০ সালের পরই জমি-বাড়ি ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আরও বড় কিছু করার ছক কষতে শুরু করেন সুদীপ্ত৷ প্রোমোটিং ছাড়াও জমিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই চিন্তা খেলতে শুরু করে তাঁর মাথায়৷ 
পুলিশের দাবি, এই সময়েই সুদীপ্তর সঙ্গে পরিচয় হয় শিবনারায়ণ দাসের৷ তিনি সুদীপ্তকে লগ্নি ব্যবস্থার খুঁটিনাটি বোঝান৷ ২০০৬-০৭ সালে যাত্রা শুরু করে সারদা রিয়্যালটি৷ 
কিন্তু এরপরই ব্যবসার গ্রাফ যত ওপরে উঠতে থাকে, মহিলাদের প্রতি সুদীপ্তর দুর্বলতাও ততই প্রকাশ্যে চলে আসতে শুরু করে৷ তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, একটা সময়ে তিনি সংস্থায় শুধু মহিলাদেরই কাজে নিয়োগ করতেন এবং তাঁর একমাত্র শর্ত ছিল ঝকঝকে ও বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা৷ ব্যবসা যত ফুলে ফেঁপে ওঠে, সারদা সংস্থায় মহিলা কর্মীর সংখ্যাও তত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে৷ শোনা যায়, সুদীপ্ত নাকি তৃতীয় বিয়েও করেছেন৷ তবে সেই মহিলা কে, তা নিয়ে অবশ্য রীতিমতো রহস্য রয়েছে৷ 

শহর ছাড়ার সময়েও মহিলা-সঙ্গ দূরে সরিয়ে রাখতে পারেননি সুদীপ্ত৷ পুলিশ সূত্রে খবর, সেসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঘনিষ্ঠ এক মহিলাকর্মী৷ কিন্তু কেন সুদীপ্ত সেই মহিলা কর্মীকে রাঁচি পর্যন্ত নিয়ে গেলেন? কেন সেখান থেকে তাঁকে ফেরত পাঠালেন? তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশাই রয়ে গিয়েছে৷ 

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34/36396

সারদা কেলেঙ্কারিতে সুদীপ্ত সেনকে জেরা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেলেন গোয়েন্দারা। সুদীপ্ত সেন জানিয়েছেন, ১০/০৯/১১ এপ্রিল ভোর চারটেয় কলকাতা ছেড়েছিলেন তিনি। একটি টাটাসুমো গাড়িতে রাঁচি যান সুদীপ্ত সেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর সেক্রেটারি ঐন্দ্রিলা। দুপুরে রাঁচি পৌঁছে সেই গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর একটি স্করপিও গাড়িতে দিল্লি রওনা হন সুদীপ্ত সেন।

স্করপিও গাড়িটি চালান অরবিন্দ সিং চৌহান। ১৩ এপ্রিল দিল্লি বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে ওঠেন দেবযানী মুখার্জি। ১৫ এপ্রিল দেরাদুন পৌঁছন সুদীপ্ত, দেবযানী ও অরবিন্দ। দেরাদুন থেকেই সারদার নিয়ন্ত্রণাধীন সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের মেল করে জানিয়ে দেওয়া হয় আর বেতন দিতে না পারার কথা। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ওই মেলের বয়ান আগে থেকেই স্থির করা ছিল।  


বাড়ির ছাদে ঝুলন্ত অবস্থায় অর্থ লগ্নি কোম্পানি হ্যালো ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের মালিকের দেহ উদ্ধার করল পুলিশ।বাড়ি হুগলির চুঁচুড়ায়৷ অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগনার নাটাগড়ে উদ্ধার হল এক লগ্নি সংস্থার এজেন্টের বাবার দেহ৷
চুঁচুড়ায় হ্যালো ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দেহ অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে৷ মৃতের নাম জয়ন্ত সরকার৷ তাঁর পরিবারের দাবি, সারদাকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন জয়ন্ত৷ মৃতের স্ত্রীর দাবি, রবিবার রাতে তাঁদের বাড়িতে যান জয়ন্তর ৩ সহকর্মী৷ রাত ৩টে নাগাদ চলে যান তাঁরা৷ সোমবার সকালে সিঁড়ির রেলিংয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হয় জয়ন্ত সরকারের দেহ৷ 
জয়ন্তর ওই ৩ সহকর্মীর নামে চুঁচুড়া থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে তাঁর পরিবার৷ পুলিশ জানিয়েছে, ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে জানা যাবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ৷ 
অন্যদিকে, এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার নাটাগড়ে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় অ্যানেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার নামে একটি লগ্নি সংস্থার এজেন্টের বাবার দেহ৷ মৃতের নাম জগদীশ রায়৷ পরিবারের দাবি, রবিবার রাতে বাড়িতে বিক্ষোভ দেখান আমানতকারীরা৷ অভিযোগ, বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি হেনস্থা করা হয় জগদীশ রায়কে৷ সেই অপমান সহ্য করতে না পেরেই তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি পরিবারের৷ 
পুলিশ সূত্রে খবর, আমানতকারীদের প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে মৃতের ছেলে বিধান রায়ের বিরুদ্ধে৷ কয়েকদিন আগে প্রতারণার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতারও করে পুলিশ৷
সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সমীরণ পাল, এবিপি আনন্দ

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36386-2013-05-06-11-20-45


চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে সরকার যে সিবিআই তদন্ত চায় না তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রশ্ন তুললেন সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে। যদিও পরিবর্তনপন্থী হিসেবে পরিচিত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও মনে করেন রাজ্যের বৃহত্তম আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত সিবিআইকে দিয়েই করানো উচিত। 
সাংবাদিক সম্মেলনের আগাগোড়াই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন শিল্পমন্ত্রী। 

কয়লাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নও তোলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্র নিয়মলঙ্ঘনকারী যে ৭৩টি লগ্নি সংস্থার তালিকা পাঠিয়েছে, তার মধ্যে ২৬টি তৈরি হয় বুদ্ধদেববাবুর আমলে৷ কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের বোঝাপড়ার অভিযোগে সরব পার্থর কটাক্ষ, সিপিএম এখন কংগ্রেস পার্টি অব ইন্ডিয়া হয়ে গিয়েছে৷ এদিকে, রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের যেখানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সভা করবেন, মঙ্গলবার সেখানে পাল্টা সভা করবে তৃণমূল৷
 
সারদাকাণ্ডের তদন্ত সিবিআইকে দিয়ে করানোর দাবিতে প্রথম থেকেই সরব বিরোধীরা। তবে রাজ্য সরকারের যে তাতে সায় নেই, একাধিকবার তা বুঝিয়ে দিয়েছেন শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা। সোমবার সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেই কথাটাই আরও স্পষ্ট করে দিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সিবিআই তদন্ত চাওয়ায় কংগ্রেস এবং বামেদের মধ্যে সমঝোতার অভিযোগও তুললেন তিনি। সাহিত্যিক মহাশ্বেতাদেবী অবশ্য সিবিআই তদন্তেরই পক্ষে


পুলিসের অনুমতি না মিললেও আগামিকাল শ্যামবাজারে সভা করবে সিপিআইএম। সভার জন্য গত তিন তারিখ আবেদন জানায় সিপিআইএম নেতৃত্ব। সভা নিয়ে আপত্তিও জানায়নি পুলিস। কিন্তু আচমকাই বিরোধী দলকে সভার অনুমতি না দেওয়ায় হতবাক রাজনৈতিক মহল।

শ্যামবাজারে গত ২ মে সভা করে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রধান বক্তা ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর কংগ্রেস এবং পিডিসিআই। কিন্তু সভা করার অনুমতি দেওয়া হল না সিপিআইএমকে। 
  
বুধবার শ্যামবাজারে সভা করার অনুমতি চেয়ে গত তিন তারিখ শ্যামপুকুর থানায় আবেদন জানায় সিপিআইএম। পুলিসের সঙ্গে আলোচনার পর ঠিক হয়, বুধবার অর্থাত্ আট মের পরিবর্তে সাত মে  সভা হবে। সিপিআইএমের দাবি, প্রথমে পুলিসের আশ্বাস মেলে। সেই মতো সভায় বক্তব্য রাখার কথা ছিল গৌতম দেব, মহম্মদ সেলিম, রবীন দেবদের। পরে অবশ্য পুলিস জানিয়ে দেয়, শ্যামবাজারে সভা করতে পারবে না সিপিআইএম।
 
মুখ্যমন্ত্রী এবং শাসক দলকে সভা করার অনুমতি দেওয়া হলেও কী কারণে অনুমতি পেল না সিপিআইএম? পুলিস জানিয়েছে, ওই নির্দিষ্ট জায়গায় পাঁচ থেকে কুড়ি তারিখ পর্যন্ত কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য সচেতনতা শিবির চলবে। সেজন্যই সভার অনুমতি দেওয়া যাবে না সিপিআইএমকে। সিপিআইএমের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই সভার অনুমতি মেলেনি। প্রশ্ন উঠেছে, পুরসভার এই অনুষ্ঠানের কথা কী আগে জানত না পুলিস? তাহলে কেন আগে  বিরোধী নেতাদের সভায় আপত্তি জানানো হয়নি ? 
 
রবিবার প্রায় একই ঘটনা ঘটে উত্তর চব্বিশ পরগনার মধ্যমগ্রামে। স্থানীয় চৌমাথায় দলীয় কর্মী পরিমল সরকার স্মরণসভার আয়োজন করে সিপিআইএম। বক্তব্য রাখার কথা ছিল বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র সহ একাধিক বাম নেতার। প্রথমে এই সভার জন্য মাইক বাজানোর অনুমতি দেওয়া হলেও, রবিবার সকালে আচমকাই সেই অনুমতি বাতিল করে পুলিস। শেষপর্যন্ত অবশ্য মধ্যমগ্রামে মাইক বাজিয়েই সভা করে সিপিআইএম। বারবার সিপিআইএমের সভায় অনুমতি দিয়েও পরে তা খারিজ করে দেওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়ছে পুলিস প্রশাসনের ভূমিকা।


শুধুমাত্র মোটা টাকা তোলার লক্ষ্যে রাজ্যজুড়ে হাজার একরের বেশি জমি কিনেছিল সারদা গোষ্ঠী। সংস্থার এজেন্টরা আমানতকারীদের বোঝাতেন ওই সব জমিতে গড়ে উঠবে স্কুল, কারখানা, হাসপাতাল, আবাসন। লক্ষ্য ছিল আমানতকারীদের আস্থা অর্জন। কিন্তু কোনও জমিতেই কোনও প্রকল্পই হয়নি। 

কর্তৃপক্ষের নির্দেশে  দিনের পর দিন আমানতকারীদের ভুল বুঝিয়ে টাকা তুলেছেন সারদার এজেন্টরা। আমানতকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল সারদা গোষ্ঠী। প্রতি জেলায় প্রকল্পের জন্য জমি কিনেছিলেন সুদীপ্ত সেন।  ওই সব জমি সামনে রেখে আমানতকারীদের আস্থা অর্জন করত সংস্থার এজেন্টরা। 

আমানতকারীদের বোঝানো হতো, সংস্থায় বিনিয়োগ করা টাকায় ওই জমিতে তৈরি হবে হাসপাতাল, স্কুল, কারখানা, আবাসনের মতো লাভজনক প্রকল্প। যদিও কোনও ক্ষেত্রেই কোনও প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। সারদাকাণ্ডের তদন্তে নেমে সুদীপ্ত সেনের ৩৪৫টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছে পুলিস। যার মধ্যে ১৮০টি অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট হাতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। পুলিস সূত্রে খবর, এমন সুদীপ্ত সেনের এমন বহু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে যাতে এক টাকাও নেই। এমন বেশ কিছু অ্যাকাউন্টের খোঁজ মিলেছে, যেগুলি খোলার পর থেকে একবারের জন্যও ব্যবহার হয়নি। রাজ্যে সারদা গোষ্ঠীর সাতটি রিজিওনাল অফিস ছিল। প্রতিটি রিজিওনাল অফিস থেকে মাসে প্রায় ষাট কোটি টাকা আসত বলে জেরায় জানিয়েছেন সুদীপ্ত। এখনও পর্যন্ত সারদা গোষ্ঠীর যে ২০০টি সম্পত্তির হদিশ মিলেছে, তার সবটাই আমানতকারীদের দেওয়া নগদ টাকায় কেনা বলে জানিয়েছেন সুদীপ্ত। 


কলকাতা: কয়লাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ কয়লার ব্লক বণ্টন কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ সিবিআইয়ের খসড়া রিপোর্টে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা৷ এবার তাকে হাতিয়ার করেই সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের মহাসচিব৷ সারদাকাণ্ডে বিরোধীরা যখন সিবিআই তদন্তের দাবিতে প্রতিদিনই সুর চড়াচ্ছে, তখন কয়লাকাণ্ডকেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে হাতিয়ার করল তৃণমূল৷ সারদাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবিকে কটাক্ষ করে সোমবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সিবিআই রিপোর্টের একটা অংশ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাই পরিবর্তন করে দিয়েছেন, তাহলে আর সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা কোথায় থাকল?
রবিবার শ্যামনগরের জনসভা থেকে কড়া ভাষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ মমতা কয়েকদিন আগেই সিপিএম মুখপত্র গণশক্তি সহ বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে ছাপা হওয়া প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের এক প্রাক্তন সিপিএম সাংসদের ছবি দেখিয়ে দাবি করেন, লগ্নি সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল সিপিএমের জবাবে বুদ্ধদেব বলেছেন, আমার ছবি দেখিয়ে উনি কী প্রমাণ করতে চাইছেন এটাই কি যে আমি, আমার পরিবারের লোকজন ও আমাদের দল লগ্নি সংস্থার টাকা নিয়েছি কেউ তো আমার সঙ্গে নিজের ছবি তুলতেই পারেন তার অর্থ তো এটা নয় যে তাঁর টাকা নিয়েছি আমরা! আসলে উনি নিজের দলের সঙ্গে কেলেঙ্কারির যোগসাজশ আড়াল করতেই মিথ্যা ছড়াচ্ছেন।বড় বড় কথা না বলে সিবিআই তদন্ত করান না তাহলেই তো সত্যিটা বেরিয়ে আসবে।
এদিন পাল্টা জবাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে লগ্নি সংস্থাগুলির রমরমার অভিযোগ তুলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্র নিয়মলঙ্ঘনকারী যে ৭৩টি লগ্নি সংস্থার তালিকা পাঠিয়েছে, তার মধ্যে ২৬টি তৈরি হয় বুদ্ধদেববাবুর আমলে৷ কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের  বোঝাপড়ার অভিযোগে সরব পার্থর কটাক্ষ, সিপিএম এখন কংগ্রেস পার্টি অব ইন্ডিয়া হয়ে গিয়েছে৷ 
এদিকে, রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের যেখানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সভা করবেন, মঙ্গলবার সেখানে পাল্টা সভা করবে তৃণমূল৷

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36391-2013-05-06-14-55-06

গণেশকে বলির পাঁঠা করে কি বাকি নেতাদের ছাড়েরই ব্যবস্থা সিপিএমে


গণেশকে বলির পাঁঠা করে কি বাকি নেতাদের ছাড়েরই ব্যবস্থা সিপিএমে

প্রসেনজিত্‍ বেরা

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের প্রাক্তন আপ্ত-সহায়ক (সিএ) গণেশ দে-কে দল থেকে বহিষ্কার করল সিপিএম৷ গত সপ্তাহে পুলিশ সারদা-কেলেঙ্কারিতে যুক্ত সন্দেহে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে৷ সেই সূত্র ধরেই দল থেকে গণেশবাবুকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএমের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটি৷ শুক্রবার রাতে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের পরে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রাজ্য নেতৃত্বকেও৷ দলীয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খড়দহ এলাকার পার্টি-সদস্য গণেশ দে দলের অজান্তে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন৷ এই অভিযোগে তাঁকে পার্টি থেকে সরাসরি বহিষ্কার করা হল৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব শনিবার বারাসতে স্বীকার করে নেন, যে 'গুরুতর অপরাধে'ই গণেশ দে-কে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, 'গণেশ দে যে চিঠি পাঠিয়েছিল তাতে যা আছে, দেখা যাচ্ছে সারদার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল৷ পানিহাটির একটি মেলার জন্য কয়েক হাজার টাকা নিয়েছিল৷ যে সারদা এখন রাজ্যে এক ঘৃণিত নাম, তাদের থেকে সাহায্য নিয়েছে৷ নেতাদের কাছ থেকে আমরা খবর নিয়েছি, তার পর আর এক মুহূর্ত দেরি করিনি ব্যবস্থা নিতে৷' সারদা-সহ অন্য বেআইনি আর্থিক সংস্থাগুলির নেটওয়ার্ক জেলায় কতটা ছড়িয়েছে তা জানার জন্য সমস্ত জোনাল সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের কাছ থেকে জেলা নেতৃত্ব যে ইতিমধ্যে রিপোর্টও নিয়েছেন, তা-ও জানিয়েছেন গৌতমবাবু৷

সিপিএম সূত্রের খবর, সুদীপ্ত সেন এবং গণেশবাবুকে জেরা করে পুলিশ সারদার সাম্রাজ্য বিস্তারে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর সিএ-র ভূমিকা সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানতে পেরেছে৷ গণেশবাবু জেরার মুখে এমন কিছু তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে ফাঁস করেছেন যা অদূর ভবিষ্যতে পার্টিকেও বিপাকে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা নেতৃত্বের৷ অসীমবাবুর ভূমিকাও যে পুলিশ খতিয়ে দেখতে পারে--তেমন জল্পনাও চলছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারের সভায় হুঁশিয়ারির সুরে স্পষ্টই জানিয়েছেন, আইনের ফাঁস থেকে কেউই ছাড়া পাবেন না৷ যা থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা মনে করছেন, গণেশবাবুর বয়ানকে হাতিয়ার করে পুলিশ এ বার সিপিএম নেতাদের নিশানা করতে পারে৷ তাই আগেভাগেই গণেশবাবুর সঙ্গে পার্টি সম্পর্ক ছিন্ন করল৷ যাতে তাঁর 'অকাজে'র দায় দলকে নিতে না হয়৷

সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব গণেশবাবুর বহিষ্কারকে শুদ্ধকরণের অঙ্গ হিসাবেই দেখাতে চাইছেন৷ সেই সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত তৃণমূলের উপরে চাপ বাড়াবে বলেও মনে করছেন সিপিএম নেতারা৷ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষকে পুলিশ সারদাকাণ্ডে জেরা করলেও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের তাই মন্তব্য, 'আমাদের নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়েছে সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যাঁদের সরাসরি সম্পর্ক থাকার বিষয় জানা যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ আমাদের দলে সততার প্রতীক এই হোর্ডিং দিয়ে কাউকে আড়াল করা হয় না৷ আমরা কাউকে আড়াল করতে চাই না বলেই সিবিআই তদন্তও চাইছি৷'

দলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে গণেশবাবুর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি৷ তবে এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ঘরে-বাইরে প্রশ্নের মুখে পড়েছে সিপিএম৷ গণেশবাবুকে তাড়ানোর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে তিনি পার্টির অজান্তে সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন৷ প্রশ্ন উঠেছে সারদার মতো বেআইনি কারবারের সঙ্গে পার্টির জ্ঞাতসারে যোগাযোগ রাখলে কি তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না? সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর যে সদস্য তথা কলকাতার যে নেতার বিরুদ্ধে সারদা গোষ্ঠীকে সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায়ে নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে কি দল কোনও ব্যবস্থা নেবে? রাজ্য সিপিএমের এক শীর্ষ নেতা প্রতি বছর যে মেলার আয়োজন করেন সেই মেলায় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আগে দেখা গিয়েছে অপর একটি বেআইনি আর্থিক সংস্থাকে৷ রাজ্য সিপিএমের এই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কি কোনও ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় কমিটি? এই ধরনের সংস্থাকে রাজারহাটে জমি দেওয়ার বিষয়েও এক সময় এগিয়ে ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য৷ তাঁর বিরুদ্ধেও কি ব্যবস্থা নেবে পার্টি? পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণায় এরকমই একটি সংস্থার ফিল্ম সিটি গড়ার কাজে সিপিএমের যে নেতারা মদত দিয়েছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে পার্টি ব্যবস্থা নেবে কি না, গণেশ দে'র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পর উঠছে সে প্রশ্নও৷ যদিও গৌতম দেব দাবি করেছেন, 'পার্টির যে কোনও স্তরের কেউ এমন আর্থিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকলে আমরা ২৪ ঘণ্টাও সময় নেব না ব্যবস্থা নিতে৷'

দলের একাংশের বক্তব্য, গণেশবাবুকে তাড়িয়ে দিয়ে পার্টি স্বীকার করে নিল শুদ্ধকরণের নামে এযাবত্ যা বলা হয়েছে তা শূন্যকলসির ঢক্কানিনাদ ছাড়া কিছু নয়৷ দলের একাংশের বক্তব্য, গণেশ দে-কে বলির পাঁঠা করে আপাতত গা বাঁচালেন বহু তাবড় নেতা৷ গণেশবাবু প্রায় ১৫ বছর অসীম দাশগুপ্তের পিএ ছিলেন৷ মহাকরণে অসীমবাবুর ঘরের বাইরে ছিল তাঁর চেম্বার৷ সেখানে বসেই সরকারি ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তিনি সারদা গোষ্ঠীকে নানা সুবিধা পাইয়ে দিয়ে টাকাপয়সা নিয়েছেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে গণেশবাবু পুলিশি জেরার মুখে পড়ার আগে পার্টি কি সত্যি তাঁর কার্যকলাপ সম্পর্কে অন্ধকারে ছিল নাকি সব জেনেও চুপ করে ছিল? যদিও গৌতম দেব দাবি করেছেন তাঁরা গত পরশু গণেশ দে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছেন৷

দলীয় সূত্রের খবর, গণেশবাবুর সারদা ঘনিষ্ঠতার অনেক সুবিধাই পার্টি নিয়েছে৷ তার মধ্যে পার্টি মুখপত্রে সারদা গোষ্ঠীর মোটা অঙ্কের বিজ্ঞাপন অন্যতম৷ এছাড়া গত বিধানসভা ভোটের আগে পার্টির নির্বাচনী তহবিলে গণেশবাবু মোটা অঙ্ক জমা দিয়েছিলেন যা তাঁর মতো সর্বক্ষণের কর্মীর পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব ছিল না৷ কিন্তু পার্টি নেতাদের কাছ থেকে টাকার উত্‍স নিয়ে তাঁকে কোনও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি৷

প্রশাসনের চোখে অভিযুক্ত হওয়ার পর পার্টির ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা অবশ্য সিপিএমে ভুরিভুরি রয়েছে৷ বছর দশেক আগে দমদমের জোড়া খুনে দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুলিশ গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ একই সিদ্ধান্ত হয়েছিল জলপাইগুড়ির সিটু নেতা তারকেশ্বর লোহার এবং বালির যুব নেতা বিশ্বজিত্‍ বসুর ক্ষেত্রে৷ খুনের মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার পর পার্টি তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছিল

http://eisamay.indiatimes.com/Ganesh-de-expelled-from-cpm/articleshow/19884066.cms

সারদা কেলেঙ্কারি ঝড় তুলেছে রাজ্য রাজনীতিতে৷ তৃণমূলের মন্ত্রী-সাংসদদের একাংশের বিরুদ্ধে বিরোধীরা সুর চড়ানোয় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা জবাব দিতে রাস্তায় নেমেছেন৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও লগ্নি সংস্থা বিতর্কে টানার চেষ্টা করেছেন৷ রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের সভা থেকে আক্রমণাত্মক মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা আক্রমণাত্মক ভঙ্গীতেই জবাব দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী৷


যে ভাবে বর্তমান রাজ্য সরকার নিয়ম-নীতি না মেনে একের পর এক কাজ করে চলেছে, যে ভাবে বিরোধী দলের কার্যালয়ে ভাঙচুর হচ্ছে, যে ভাবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে হয়রান করা হচ্ছে, যে ভাবে রাজ্য জুড়ে টাকা নয়ছয় এবং সমাজবিরোধীদের দাপট চলছে এ সবের বিরুদ্ধেই এ বার রুখে দাঁড়ানোর ডাক শোনা গেল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের গলায়। সিপিএমের এই পলিটব্যুরো সদস্যের হুঁশিয়ারি, "কত দিন মাথা নিচু করে মানব? কেন মানব? যাঁরা প্রশাসনে আছেন, সরকারে আছেন, জেনে নিন, সময় আসছে হিসেব-নিকেশ বুঝে নিতে হবে আমাদের! এ সব চলতে পারে না! অবস্থা পাল্টাতে হবে।"
রাজ্যে শিল্পায়নের করুণ দশা, ছেলেমেয়েদের চাকরির অভাব, কৃষকের সঙ্কটের প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বেশ কিছু দিন ধরেই আক্রমণ করে আসছেন বুদ্ধবাবু। কিন্তু রবিবার যে ভাবে 'বুঝে নেওয়া'র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি, তাতে অদূর ভবিষ্যতে সরকার-বিরোধী আন্দোলনে সিপিএমের তীব্রতা বাড়ানোরই ইঙ্গিত মিলছে। বস্তুত, সারদা-কাণ্ডকে সামনে রেখে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে যে সুরে পাল্টা আক্রমণ করেছেন তাঁর পূর্বসূরি, তা-ও যথেষ্ট বিরল। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা বলাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন। বর্তমানের ভাষা শুনলে তাঁর শরীর খারাপ লাগে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী!
প্রত্যাশিত ভাবেই, বুদ্ধবাবুর এমন আক্রমণের পত্রপাঠ কড়া জবাব এসেছে শাসক দলের তরফে। তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, "ব্রিগেডে আস্তিন গুটিয়ে উনি বলেছিলেন, মাথা ভেঙে দেব! বিধানসভায় বলেছিলেন, সব শেষ করে দেব! তাঁর ওই সব হুঁশিয়ারি থেকেই রক্তাক্ত হয়েছিল বাংলা। তাঁদের জামায় রক্তের দাগ দেখেই সিপিএমকে পরিত্যাগ করেছিল বাংলার মানুষ। দেখা যাচ্ছে, অতীত থেকে কোনও শিক্ষা হয়নি! আয়নায় নিজেদের মুখ দেখে তার পরে মানুষের কাছে যান!"
দীর্ঘদিন অন্তরালে থাকার পরে প্রথম জনসমক্ষে এসে এবিপি আনন্দে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রথম তৃণমূল নেত্রীর সততার ভাবমূর্তিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন বুদ্ধবাবু। সারদা কাণ্ডের পরেও সেই ধারা অব্যাহত রাখেন তিনি। যার জেরে পরের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধবাবুর সঙ্গে অর্থলগ্নি সংস্থার কর্ণধারদের ছবি দেখিয়ে পাল্টা প্রচারে যান মমতা। সেই প্রচারের জবাব আবার রবিবার শ্যামনগরের অন্নপূর্ণা মাঠে দিয়েছেন বুদ্ধবাবু। বলেছেন, "নিজেদের অপরাধ সামনে আসতেই এখন আমি চোর, আমরা চোর বলে হইচই শুরু করেছেন! আমার ছবি দেখাচ্ছেন। ভাল করে দেখান! ছবি দেখিয়ে কী প্রমাণ করতে চাইছেন? আমি চিট ফান্ডের থেকে টাকা নিয়েছি, আমার পরিবারের লোক নিয়েছে, কাউকে কোনও সংস্থার মাথায় বসিয়েছি, দলের কাউকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছি একটা বার করতে পারবেন? দুর্নীতিগ্রস্ত দল একটা!" 
এর জবাবে পার্থবাবু বলেছেন, "বুদ্ধবাবু নিজেকে সৎ বলে মনে করেন। মৌলালি থেকে মাদার হাউস পর্যন্ত রাস্তার ধারে একটা বাড়িও তো বাদ নেই। এ সব কি কৌটো নাড়িয়ে হয়েছে? জনসভায় আঁকুপাঁকু না-করে বুদ্ধবাবু এ সব প্রশ্নের জবাব দিন!" আবার বুদ্ধবাবুর সভা-মঞ্চ থেকেই সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব জানিয়ে দিয়েছেন, মমতার অভিযোগের জবাবে শ্যামবাজারে সভা করে তাঁরা দেখিয়ে দেবেন তৃণমূলের মুখপত্র অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে কী ভাবে বিজ্ঞাপন নিয়েছিল! তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রত্যুত্তরে বুদ্ধবাবু আক্রমণ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বেশ কয়েক ধাপ। বলেছেন, "পয়লা বৈশাখের আগে কিছু জানতাম না বলছেন! আদালতে হলফনামায় ধরা পড়ে গেল সব। মিথ্যা কথা বলাটা অভ্যাস! তাঁর দলের লোক ওই কোম্পানির সংবাদমাধ্যমের মাথায় আছেন, জানতেন না? তাঁর দলের লোক ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর (সারদা), জানতেন না? ওদের কাছ থেকে দলের কারা মাসোহারা পেত, জানতেন না?" সত্য উদ্ঘাটনের জন্য সিবিআই তদন্তের পক্ষেও সওয়াল করেন বুদ্ধবাবু। বলেছেন, "সিবিআই আসুক না! দেখা যাবে, আমাদের দল আর ওই দল কোথায় দাঁড়িয়ে! সততা দেখাচ্ছেন?"
জবাবে পার্থবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, "রাজ্যকে কেন্দ্রীয় সরকারের উপনিবেশ বানাতে দেব না যারা বলত, সেই সিপিএম কি পুরনো স্লোগান ভুলে গেল? সিবিআইয়ের হাত ধরে কেন্দ্র যাতে রাজ্যের ঘাড়ে চাপে, উনি সেই ব্যবস্থা করতে চাইছেন? এতই যদি সিবিআইয়ে ভরসা, নন্দীগ্রাম-নেতাইয়ের পরে কেন সিবিআই তদন্তের দাবি মানেননি?" আক্রমণের সুর চড়াতে গিয়ে প্রাক্তন এ দিন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর শ্যামবাজার ও পানিহাটির সভার দৃষ্টান্ত টেনেছেন। তীব্র কটাক্ষে বলেছেন, "আমাকে কেউ কেউ দেখতে বলেছিলেন। দেখলাম। চলছে তো চলছেই! টেলিভিশন খুললে শরীর খারাপ হয়ে যায়!" কেন? বুদ্ধবাবুর কথায়, "কী ভাষা! এটা মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা? চমকে লাভ নেই! ওভার বাউন্ডারি মারব! ঘেষঁতে দাওনি তো কি ঘষতে দিয়েছো? ঘষে দেওয়া মানে কী? এক জন মহিলা, তার উপরে মুখ্যমন্ত্রী। গা-বমি করে। শরীর খারাপ লাগে, সত্যি বলছি! আমাদের অভিশাপ, এ সব শুনতে হচ্ছে!" প্রাক্তনের অভিযোগ, লুম্পেন আর সমাজবিরোধীতে ভরে গিয়েছে বর্তমান শাসক দল এবং সরকার। তাদের ভাষাই শোনা যাচ্ছে!
প্রাক্তনের এ দিনের চড়া সুরের পরে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, ফের বর্তমানের পাল্টা ময়দানে নামার সম্ভাবনা যথেষ্ট! যে পরিস্থিতির কথা এ দিন উত্তর ২৪ পরগনারই মধ্যমগ্রামে কটাক্ষের সুরে ধরিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র "তৃণমূল খালি আমাদের নকল করে। সোনার একটা নকল হয় 'ইমিটেশন'। পাঁচ বছর পরে ধরা পড়ে যায়, কোনটা সোনা আর কোনটা ইমিটেশন!"

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36364-2013-05-06-03-46-23

তিন কোটি টাকার জীবন বিমা ছিল সুদীপ্তর


0
তিন কোটি টাকার জীবন বিমা ছিল সুদীপ্তর

এই সময়: নিজে ছিলেন লোক-ঠকানো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোটিপতি কর্ণধার৷ তা সত্ত্বেও সুদীপ্ত সেন কিন্ত্ত নিজের জীবন বিমার জন্য ভরসা করেছিলেন সরকারি সংস্থা জীবন বিমা নিগমের ওপর৷ জীবন বিমা করিয়েছিলেন ৩ কোটি টাকার৷ স্বাভাবিক ভাবেই বেশ মোটা অঙ্কের টাকা প্রিমিয়াম হিসেবেও দিতে হত তাঁকে৷ সারদা গোষ্ঠীর বিভিন্ন দন্তরে হানা দিয়ে পুলিশ যে কাগজপত্র বাজেয়ান্ত করেছে, তাতেই পাওয়া গিয়েছে এই সংক্রান্ত নথিপত্র৷ তবে তদন্তকারী অফিসারদের ধারণা, নিজের মাত্র একটি বিমা করিয়েছেন সুদীপ্ত সেন, এটা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ ফলে তাঁর সরকারি এবং বেসরকারি বিমার পরিমাণ জানতে ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (আইআরডিএ)-কে চিঠি লেখা হচ্ছে৷ এ বিষয়ে দেবযানী মুখোপাধ্যায়ও পুলিশকে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে৷

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় সুদীপ্ত সেন রাজনৈতিক দল এবং নেতাদের আর্থিক সাহায্যের কথা বারবার জানাচ্ছেন গোয়েন্দাদের৷ তিনি জানিয়েছেন, ৬ এপ্রিল থেকে গা ঢাকা দেওয়ার দিন, অর্থাত্ ১০ তারিখ পর্যন্ত শাসকদলের ৪ জন সাংসদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন৷ এঁদের মধ্যে কলকাতার বাইরের এক সাংসদের সঙ্গে মিডল্যান্ড পার্কে সারদার সদর দন্তরে তাঁর বৈঠক চলে রাত দশটা পর্যন্ত৷ পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, জেরায় তিনি যে সব নাম বলছেন, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷ প্রয়োজনে সেই সাংসদদের সঙ্গে কথা বলা হবে৷ পুলিশের ধারণা, সাংসদদের সঙ্গে কথা বলার পরেই সিবিআইকে সরাসরি ২৮ পাতার চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নেন সুদীপ্ত সেন৷

গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ১২ দিন বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ কর্তারা এখন পর্যন্ত সুদীন্তর ২৯৪টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছেন৷ কিন্ত্ত তাতে কত টাকা জমা রাখা হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলি এখনও পুরোপুরি জানায়নি৷
বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ জানিয়েছেন, '১০০টির মতো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট আমাদের কাছে এসে পৌছেছে৷ এদের মধ্যে এমন অনেক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যেগুলিতে কোনও টাকা নেই অর্থাত্ নামে মাত্র অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল৷'

কিন্ত্ত কী কারণে এই বইগুলি খোলা হয়েছে, তা পুলিশের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়৷ পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত সারদার জমি এবং বাড়ি মিলিয়ে মোট ২০০টি স্থাবর সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গিয়েছে৷ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এই সংস্থার আরও সম্পত্তি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বলে পুলিশের ধারণা৷ সারদা-কর্তার সম্পত্তির পরিমাণ মানুষকে জানাতে কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্য পুলিশ এবং সিআইডি-র ওয়েবসাইটে সুদীন্ত সেনের বাজেয়ান্ত করা সম্পত্তির তালিকা প্রকাশ করবে বিধাননগর কমিশনারেট৷ একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানানো হবে, যাতে এই তালিকার বাইরে সারদার কোনও সম্পত্তির হদিশ নিজেদের এলাকায় পেলে তা তাঁরা স্থানীয় থানায় জানান৷ সে ক্ষেত্রে ভূমি এবং ভূমি দন্তরের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জমির মালিকানা জানার চেষ্টা করবে৷ তবে রোজই কোথাও না কোথাও সারদার সম্পত্তির হদিশ পাচ্ছেন কমিশনারেটের গোয়েন্দারা৷ এদিনও মালদায় সারদার একটি জমির হদিশ পেয়েছেন গোয়েন্দারা৷ সেখানে একটি স্কুল খোলার পরিকল্পনা করেছিলেন সুদীন্ত সেন৷ বনগাঁর জমিটিতে আবার নার্সিংহোম করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর৷
জমি আসলে বড় অস্ত্র ছিল সুদীন্তবাবুর৷ সব জায়গাতেই জমি দেখিয়ে প্রথমে এজেন্টদের প্রলুব্ধ করা হত৷ এজেন্টরা সেই সম্পত্তির উল্লেখ করে আমানতকারীদের থেকে টাকা তুলত৷ এ ভাবেই ফুলেফেঁপে উঠছিল ব্যবসা৷ দিনে সারদা গোষ্ঠীর আয় হত ২ কোটি টাকা করে৷ মাসে সেই অঙ্ক দাঁড়াত ৬০ কোটি টাকায়৷


চিঠি লিখেই ফেরার, বলছে পুলিশ
সঙ্কটকালে সুদীপ্ত আর পাশে পাননি নেতাদের
রাজ্য ছেড়ে পালানোর আগে কয়েক জন রাজনৈতিক নেতার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন। জেরায় তাঁর মুখে এ কথা জানার পরে তদন্তকারীদের প্রাথমিক ধারণা, ওই নেতাদের কাছে নিরাপদ আশ্রয় না-পেয়েই সুদীপ্তকে রাজ্য ছাড়তে হয়। যদিও তাঁরা কে কোন দলের, তা নিয়ে পুলিশ মুখ খুলতে চায়নি। 
গত ৬ এপ্রিল সুদীপ্ত সিবিআই-কে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তাতে সারদা গোষ্ঠীর পতনের জন্য কয়েক জনকে দায়ী করেন তিনি। পুলিশের দাবি: চিঠিটি লেখার আগে তিনি ওই নেতাদের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে গোপনে বৈঠকও করেন সারদা-কর্ণধার। তদন্তকারীদের অনুমান, বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পরেই সিবিআই-কে চিঠি লিখে সারদা-কর্তা গা ঢাকা দেন। পুলিশের দাবি: জেরায় এ-ও উঠে এসেছে যে, দীর্ঘ দিন ধরে নিজের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী (পলিটিক্যাল লবি) তৈরি করেছিলেন সুদীপ্ত। উল্লিখিত নেতারা সেই 'লবি'র সদস্য কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন দলের ছোট মাপের নেতাদের সঙ্গেও সুদীপ্ত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলেছিলেন বলে তদন্তের ইঙ্গিত। এই সূত্রে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর অসীমবাবুর আপ্ত-সহায়ক গণেশ দে-কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এমন আরও ছ'জনের নাম মিলেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এই রাজনৈতিক যোগসূত্রের পাশাপাশি সারদার সম্পত্তির হিসেব-নিকেশ নিয়েও পুলিশ ধাঁধায়। সুদীপ্তকে গ্রেফতার করার পরে বারো দিন অতিক্রান্ত। এখনও সারদা গোষ্ঠীর বিপুল সম্পত্তির পুরো হদিস মেলেনি। 
তদন্তকারীদের দাবি: সাম্রাজ্য তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে টের পেয়েই আমানতকারীদের টাকা অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছিলেন সারদা-কর্তা। কিন্তু কোন পথে, কোথায় ও কী ভাবে, তা গোয়েন্দারা এখনও বুঝে উঠতে পারেননি। গোয়েন্দা-সূত্রের খবর: বেশ ক'টি অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা মেলেনি। সেগুলির কয়েকটি খোলার পরে ব্যবহারও করা হয়নি। উপরন্তু অধিকাংশ অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে নেট-ব্যাঙ্কিং মারফত। ফলে সে সংক্রান্ত তথ্য পেতে গোয়েন্দাদের বিস্তর কাঠ-খড় পোড়াতে হচ্ছে। 
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সারদা-সম্পত্তির হদিস পেতে তাঁরা খানিকটা ভরসা করেছিলেন সংস্থাটির কিছু পদস্থ কর্মীর উপরেও, গোড়ায় যাঁরা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করছিলেন। কিন্তু ইদানীং ওঁদের দেওয়া তথ্য বিশেষ কাজে আসছে না বলে খবর। এমনকী, সুদীপ্তের ছায়াসঙ্গী দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের জোগানো তথ্যও নয়। এই পরিস্থিতিতে গোয়েন্দাদের দাবি, সম্পত্তির হদিস দিতে পারেন একমাত্র সুদীপ্তই। পুলিশ সূত্রের খবর: জীবন বিমা নিগমে সুদীপ্তের একটি পলিসি-র হদিস মিলেছে। অন্যান্য বিমা সংস্থায় তাঁর কোনও বিনিয়োগ আছে কি না, যাচাই করতে হায়দরাবাদের ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিধাননগর কমিশনারেটের এক পুলিশ-কর্তা। 
গোয়েন্দা-সূত্রের খবর: বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা সদরে প্রচুর জমি কেনা ছিল সারদার। সেগুলো দেখিয়েই লোকের কাছ থেকে টাকা তোলা হতো। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওই সব জমিতে কোনও কাজ হয়নি। বনগাঁ, কাঁথি, মালদহেও এমন জমি রয়েছে। "এ পর্যন্ত সারদার এমন শ'দুয়েক জমি-সম্পত্তির হদিস মিলেছে, যার দাম অন্তত ৩৫ কোটি টাকা। অনেক জমির রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশনও করা হয়নি।" মন্তব্য এক গোয়েন্দা-কর্তার। 
তদন্তকারী-সূত্রের খবর: জেলার দায়িত্বে থাকা সারদার কয়েক জন এজেন্ট ও পদস্থ কর্মীর খোঁজ চলছে। পুলিশের দাবি, জেরায় সুদীপ্তবাবু এমন কয়েক জনের নামে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এবং তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-ও দিয়েছেন। এই সূত্রে উত্তর ২৪ পরগনার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। খোঁজ চলছে ফেরার এক জেনারেল ম্যানেজারেরও। এ ক্ষেত্রে অবশ্য সারদা কর্তা যথেষ্ট সাহায্য করছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। বারুইপুরে সারদা গোষ্ঠীর এক এজেন্টের বাড়িতে এ দিন তল্লাশি চালায় পুলিশ। বেশ কিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। এজেন্টের সন্ধান মেলেনি। পুলিশ সূত্রের খবর, সারদা গোষ্ঠীর পতনের পিছনে ওই এজেন্ট অন্যতম দায়ী বলে সুদীপ্ত জেরায় জানিয়েছিলেন। 
সারদা-সম্পত্তির খোঁজে শনিবার রাতেও সল্টলেকের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলেছে। পাশাপাশি শনিবার বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) বৈঠকে স্থির হয়েছে, জেলায় সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তিগুলি সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশই বাজেয়াপ্ত করবে। সম্পত্তির হদিস পেতে জনসাধারণেরও সাহায্য নেবে পুলিশ। রবিবার বিধাননগরের গোয়েন্দা-কর্তা অর্ণব ঘোষ জানিয়েছেন, আদালতের অনুমতি নিয়ে সম্পত্তির তালিকা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এর বাইরে কোনও সম্পত্তির কথা জানা থাকলে সাধারণ মানুষ পুলিশকে সে তথ্য দিতে পারবেন বলেও অর্ণববাবুর দাবি। 
গত বারো দিনে দফায় দফায় জেরার জেরে সুদীপ্ত কিছুটা ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র। দিন দু'য়েক ধরে লক-আপে কান্নাকাটিও করেছেন তিনি। তদন্তকারীদের ধারণা, দুঃসময়ে পরিচিত-পরিজনদের অভাবই তাঁকে মানসিক ভাবে আরও বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। বিশেষত, দেবযানীর সঙ্গে তাঁর পরিজন ও আইনজীবীরা দেখা করতে এলেও সুদীপ্তবাবুর কাছে তেমন কেউ আসছেন না। তবে তদন্তকারীদের একাংশের মতে, সুদীপ্তের এই মানসিক অবস্থা এক দিকে তাঁদের সাহায্যই করছে। এক অফিসারের কথায়, "আবেগের বশে অনেক সময়ে অনেকের সম্পর্কে অনেক তথ্য উগরে দিচ্ছেন সারদা-কর্তা।"
এ দিনও সন্ধ্যায় বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার ও গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষ নিউটাউন থানায় গিয়ে দেবযানী ও সুদীপ্তকে আলাদা আলাদা ভাবে জেরা করেন। আজ সোমবার সল্টলেকের শ্যামল সেনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিশনের অফিসে অভিযোগ জমা নেওয়া শুরু হবে। উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক ও বিধাননগরের পুলিশ-কর্তারা গোটা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মোতায়েন করা হয়েছে বিশেষ পুলিশবাহিনী। অভিযোগ নেওয়ার জন্য জনা চল্লিশ কর্মী থাকবেন।
http://www.anandabazar.com/6raj1.html
আবাসনে এ বার সিআইডি তদন্তের মুখে গৌতম দেব
শাসক দল আগেই তাঁকে আদালতে টেনে নিয়ে গিয়েছে। এ বার আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রশাসনিক সাঁড়াশির মুখে সিপিএমের দাপুটে নেতা গৌতম দেব। বাম জমানায় গৌতমবাবুর আবাসন দফতরের কার্যকলাপ নিয়ে সিআইডি তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য সরকার।
গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাম জমানায় তাঁর আবাসন দফতর বিনা টেন্ডারে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিল মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সংস্থাকে। যার জেরে আবাসন দফতরের ক্ষতি হয়েছে ২০ কোটি টাকারও বেশি। অভিযোগ, ওই সংস্থাটির সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ছেলে চন্দন বসুর নাম জড়িত। গত মাসেই আবাসন দফতরের সচিবের পক্ষ থেকে গৌতমবাবু-সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে এফআইআর করা হয়। তার পরেই সরকারের তরফে ওই দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি-র হাতে। আবাসন দফতরের ওই অভিযোগের তদন্তের জন্য সিআইডি-র একটি বিশেষ দলও গঠন করা হয়েছে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন এক জন ডেপুটি সুপার (ডিএসপি)। সিআইডি-র স্পেশ্যাল আইজি বিনীত গোয়েল অবশ্য বলেন, "তদন্ত শুরু হয়েছে। এখন কিছু বলা যাবে না।"
মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে সিপিএমের রাজ্য নেতাদের মধ্যে সব চেয়ে সরব এবং আক্রমণাত্মক
গৌতমবাবুই। তাই তাঁকে আবার পাল্টা আক্রমণের নিশানা করেছে শাসক দল। আগেও প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে বারেবারেই দুর্নীতির অভিযোগ করেছে তৃণমূল। শাসক দল এবং স্বয়ং তৃণমূল নেত্রীর পরিবারকে জড়িয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করায় গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও হয়েছে। কয়েক দিন আগেই প্রাক্তন মন্ত্রীর পরিবারকে আবার পাল্টা জড়িয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। কিন্তু সরাসরি পুলিশে অভিযোগ এবং তার ভিত্তিতে বাম জমানার এক প্রভাবশালী প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্ত এই প্রথম। 
গৌতমবাবু অবশ্য এই পদক্ষেপে বিচলিত নন। মমতা তাঁর পিছনে পুলিশ লাগিয়ে কিছু করতে পারবেন না, হামেশাই বলে থাকেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য। মন্ত্রী হিসেবে তাঁর পুরনো দফতরের কাজ নিয়ে সিআইডি তদন্তের সিদ্ধান্ত জেনেও রবিবার গৌতমবাবু বলেছেন, "আমি স্বাগত জানাচ্ছি! সিআইডি কেন, তৃণমূলের প্রথম সারির তিন জন নেতা-মন্ত্রীকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়ে দিন মুখ্যমন্ত্রী। সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন মুখ্যসচিব এবং এখন মন্ত্রী মণীশ গুপ্তকে রাখুন। সেই কমিটি তদন্ত করুক। তারা বলুক আমি বেআইনি কাজ করেছি!" গৌতমবাবুর যুক্তি, রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করালে কিছু নিয়ম মানতে হবে, ন্যূনতম কিছু নিরপেক্ষতা দেখাতে হবে। তার বদলে তৃণমূলের দলীয় তদন্ত কমিটিও যদি হয়, তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত!
সিপিএম নেতৃত্বর মতে, রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে তৃণমূল 'প্রতিহিংসা'র পথে যাচ্ছে। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, "ওঁরা চাইছেন যে করে হোক গৌতমবাবুর মুখ বন্ধ করতে! কিন্তু এ ভাবে কিছু করতে পারবেন না। শুধু গৌতমবাবু কেন, আমরা সবাই জেলে যেতে তৈরি আছি!" চন্দনবাবুর নাম জড়ালেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। 
সিআইডি সূত্রের খবর, আবাসন দফতরের সচিবের দায়ের-করা অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে ওই সংস্থাটিকে বিনা টেন্ডারে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বাড়ি বানানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল আবাসন দফতরের পক্ষ থেকে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার দু'টি জায়গায় নিম্ন, মধ্য ও উচ্চবিত্তদের জন্য বাড়ি তৈরি করার কথা ছিল প্রাক্তন মন্ত্রীর 'ঘনিষ্ঠ' ওই সংস্থার। অভিযোগ, সংস্থাটি উচ্চবিত্তদের জন্য কিছু বাড়ি তৈরি করলেও নিম্ন এবং মধ্যবিত্তদের জন্য কিছু করেনি। আবাসন দফতরের অভিযোগ, নিজেরা বাড়ি তৈরি না করে ওই সংস্থা আবার অন্য একটি সংস্থাকে বাড়ি তৈরি করার জন্য 'লিজ' দিয়ে দেয়। কিন্তু ওই সংস্থাও শেষ পর্যন্ত কোনও আবাসন গড়েনি বলেই সরকারি পক্ষের অভিযোগ।
সিআইডি সূত্রেরই বক্তব্য, আবাসন দফতরের সঙ্গে প্রাক্তন মন্ত্রীর 'ঘনিষ্ঠ' সংস্থাটির সমঝোতা হয়েছিল যে, নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি তৈরি না-হলে জরিমানা-সহ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু ঠিক সময়ে অভিযুক্ত সংস্থাটি বাড়ি তৈরি করেনি। কোনও জরিমানা বা ক্ষতিপূরণও দেয়নি। আবাসন দফতরের এক অফিসারের দাবি, এতে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে দফতরের। এবং বিনা টেন্ডারে ওই সংস্থাকে জমি দেওয়ায় দফতরের ক্ষতি হয়েছে ১৯ কোটি টাকার কিছু বেশি।
http://www.anandabazar.com/6raj4.html

সঞ্চয়িতা-ওভারল্যান্ডের টাকা মেটানো অনিশ্চিত
কটির ক্ষেত্রে রিসিভার বসেছিল ১৯৮৩ সালে। অন্যটির ক্ষেত্রে ১৯৯৮-তে। প্রথমটির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে রিসিভার বসানোর নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু সঞ্চয়িতা এবং ওভারল্যান্ড দুই আর্থিক কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রেই আমানতকারীরা এখনও পুরো টাকা ফেরত পাননি। কবে যে সব আমানতকারী টাকা ফেরত পাবেন, তা জানেন না আদালত নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসারেরাও। 
ওভারল্যান্ডের ক্ষেত্রে টাকা কিন্তু কোনো সমস্যা নয়। বন্ধ করে দেওয়া ওই লগ্নি সংস্থার যে সম্পত্তি রাজ্য সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল, তা বিক্রি করেই সব আমানতকারীর টাকা মোটানো সম্ভব বলে মনে করছে আদালত নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর। তা হলে সব আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে এত দেরি হওয়ার কারণ কি? 
স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর সূত্রের দাবি, প্রতিটি জমি বিক্রি নিয়ে বার বার আদালতের অনুমতি নিতে হচ্ছে। তার পরে বিজ্ঞাপন দিতে হচ্ছে। এর ফলে গোটা প্রক্রিয়ায় অযথা দেরি হচ্ছে। 
আর সঞ্চয়িতার ক্ষেত্রে ঠিক কত টাকা লগ্নি সংস্থাটি বাজার থেকে তুলেছিল, সেটাই এখনও পরিষ্কার নয়। পাশাপাশি সঞ্চয়িতার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যে পরিমাণ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল, কার্যত দেখা যাচ্ছে, তার অনেকটাই তাদের হাতে আসবে না। আদালত নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর জানাচ্ছে, সঞ্চয়িতার বাজেয়াপ্ত করা অনেক বাড়ির ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেগুলিকে দেখিয়ে সঞ্চয়িতা বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিল। সেই ঋণের টাকা আর শোধ করতে পারেনি সংস্থাটি। আদালতের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক ওই বাড়ির দখল নিয়েছে। 
স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর হিসেব করে দেখেছে, ১ লক্ষ ৩১ হাজার আমানতকারীর কাছ থেকে সঞ্চয়িতা যে টাকা তুলেছিল, তার মাত্র ২০ শতাংশ মূল্যের সম্পত্তি কমিশনের হাতে এসেছে। মূল সমস্যাটা সেখানেই। বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি বর্তমান বাজার দরে বিক্রি করার অনুমতি পেলে তহবিল যেমন বাড়ত, তেমনই সব আমানতকারীকে টাকা দেওয়ার গ্যারান্টিও দেওয়া যেত বলে স্পেশ্যাল অফিসারের দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছেন। সঞ্চয়িতার স্পেশ্যাল অফিসারকে আগে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হত। তাতে অযথা সময় নষ্ট হচ্ছিল। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টকে এই দায়িত্ব দেওয়ার গোটা প্রক্রিয়াটি অনেকটাই সরল হয়েছে। তা সত্ত্বেও সঞ্চয়িতার গোটা প্রক্রিয়া কবে শেষ হবে, তার কোনও পূর্বাভাস দিতে পারেনি স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর।
আবার ওভারল্যান্ডের জন্য গঠিত রিসিভারের অফিস সূত্রের খবর, ওই সংস্থায় টাকা খাটিয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৪১ হাজার মানুষ। ওভারল্যান্ড মোট ৩৪ কোটি ৯ লক্ষ টাকার আমানত সংগ্রহ করেছিল। স্পেশ্যাল অফিসারের দফতরের দাবি, ৯৭ হাজার আমানতকারী ইতিমধ্যেই ৬ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা ফেরত পেয়ে গিয়েছেন। এখনও ২ লক্ষ ৪৪ হাজার আমানতকারীকে টাকা দেওয়া বাকি। তার জন্য আরও ২৭ কোটি ২১ হাজার প্রয়োজন। 
কী ভাবে এত টাকা মেটালেন স্পেশ্যাল অফিসার? বাকি টাকাই বা আসবে কোথা থেকে? 
ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে পুলিশ ওভারল্যান্ডের ১ হাজার ৫৪৬ বিঘা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল। সেই সম্পত্তি বিক্রি করেই ধীরে ধীরে আমানতকারীদের টাকা মেটানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৩৪ বিঘা জমি বিক্রি করা হয়েছে। তা থেকে প্রাপ্ত টাকা থেকে মেটানো হয়েছে ৯৭ হাজার আমানতকারীর পাওনা। 
স্পেশ্যাল অফিসারের অফিস সূত্রের খবর, ওভারল্যান্ডের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির মধ্যে বেশ কিছু জমি রয়েছে রাজারহাট-নিউটাউন, বর্ধমান সদর এলাকায়। যেখানে জমির বর্তমান বাজারদর আকাশছোঁয়া। ওই জমি বিক্রি করে আমানতকারীদের সুদ-সহ সব টাকা মেটানো যেত। কিন্তু আমানতকারীদের শুধু আসলের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। কেন? ওভারল্যান্ডের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসার রণজিৎ মিত্র বলেন, "আমরা আমানতকারীদের শুধু 'আসল'-টা ফেরত দিচ্ছি। কোনও সুদ দেওয়া হচ্ছে না। এমনটাই আদালত নির্দেশ দিয়েছিল।" 
এত মূল্যবান জমি যখন সরকারের হাতে রয়েছে, তখন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে এত দেরি হচ্ছে কেন? স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর সূত্রে বলা হয়, গোটা প্রক্রিয়াটাই অত্যন্ত জটিল। বাজেয়াপ্ত কোনও জমিরই আর্থিক মূল্যায়ন করা হয়নি। প্রতিটি জমি বিক্রির ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশে বিজ্ঞাপন দিতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আদালতও জমির দাম ঠিক করে দিচ্ছে। তাই এত দেরি হচ্ছে। দেরিতে হলেও ওভারল্যান্ডের আমানতকারীরা একটু একটু করে তাঁদের টাকা ফের পাচ্ছেন। যে জমি সরকারের হাতে রয়েছে, তাতে সব আমানতকারীই যে তাঁদের আমানত ফেরত পাবেন সেই নিশ্চয়তা দিয়েছেন স্পেশ্যাল অফিসার। তিনি বলেছেন, "ওভারল্যান্ডের সব আমানতকারীকেই তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।"
http://www.anandabazar.com/6raj5.html

চিঠিতে ডালুর ভোলবদলের কারণ খুঁজছে সিট
ক বার তিনি নালিশ ঠোকেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এক বার করেন প্রশংসা। কেন এবং কী পরিস্থিতিতে সারদা ও অন্য কয়েকটি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে বার বার অবস্থান পাল্টেছিলেন আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালুবাবু বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-ও তা খতিয়ে দেখছে। কংগ্রেসের এই সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী চার বার চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। প্রতি বারই অভিযোগের নিশানায় কিছু বদল হয়েছে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ওই চিঠিগুলির কপি শ্যামল সেন কমিশনে জমা দিয়েছে। রাজ্য সরকারের গড়া সিট-ও এ বার তদন্তে নেমেছে বিষয়টি নিয়ে। জানার চেষ্টা করছে, কেন প্রধানমন্ত্রীকে লেখা পর পর দু'টি চিঠিতে সারদা সংস্থা ও তার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার আট মাসের মধ্যে তৃতীয় চিঠিতে পুরো একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেল ডালুবাবুর মত। তৃতীয় চিঠিতে তিনি সারদা-র বিরুদ্দে করা অভিযোগ প্রত্যাহারই শুধু করেননি, উল্টে ঢালাও প্রংশসা করেছিলেন সংস্থাটির। সারদা-র কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকেও এ বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
সিট-এর সদস্য, রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, "সারদা-র বিষয়ে ডালুবাবু কেন বার বার অবস্থান বদলেছেন, সে ব্যাপারে আমরা খোঁজ করছি।" তিনি জানান, সারদা-র বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ডালুবাবু প্রথম চিঠিটি দেন ২০১১-র ৪ অগস্ট। দ্বিতীয়টি ১৯ অগস্ট। পরে ২০১২-র ১৫ মার্চ তৃতীয় চিঠিতে তিনি জানান, সারদা যাবতীয় আইন মেনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। মাসখানেক পর, ১৮ এপ্রিল তিনি ফের একটি চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেখানে অন্য চারটি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানান।
ডালুবাবু রবিবার বলেন, "আমি আমার বিবেকের কাছে পরিষ্কার। আমার ওই সমস্ত চিঠি নিয়ে তদন্ত হলে হোক।" সারদা ও সুদীপ্ত সেন সম্পর্কে তাঁর মত বদলের কারণ কী? কংগ্রেস সাংসদের বক্তব্য, "প্রথম চিঠিতে আমি সুদীপ্ত সেনকে ভুলবশত সঞ্চয়নীর কর্ণধার ভূদেব সেনের ছেলে বলে উল্লেখ করি। পরে সারদা-র তরফে আমাকে এ-ও জানানো হয় যে, সারদা রিয়েলটি লিমিটেড অর্থলগ্নি সংস্থা নয়। আমি ওদের কথা বিশ্বাস করেছিলাম। সে জন্যই পরে প্রধানমন্ত্রীকে অন্য রকম চিঠি দিই।"
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে লেখা ডালুবাবুর প্রথম দু'টি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককে লেখা একটি চিঠিতে সেবি ইঙ্গিত দেয়, সারদা রিয়েলটি লিমিটেড-এর কাজকর্মের উপর তারা নজর রাখছে এবং সংস্থাটি ১৯৯৯-এর সেবি কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমস রেগুলেশনস ভেঙে কাজ-কারবার চালাচ্ছে। ২০১২-র ১৩ ফেব্রুয়ারি সেবি-র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিভিশন অফ কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমস) এস মধুসুধানন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব অলোক নিগমকে লেখা চিঠিতে ওই কথা জানান। এই প্রসঙ্গ তুলতেই ডালুবাবুর জবাব, "বললাম তো, ওদের কথায় বিশ্বাস করেছিলাম। সে জন্যই পরে অন্য রকম চিঠি দিই। আমার কথা কি ভারতীয় সংবিধান নাকি? সেবি তাদের অনুসন্ধানে অন্য রকম কিছু পেতেই পারে!" 
তদন্তকারীদের দাবি, প্রথম দু'টি চিঠির জন্য সারদা সংস্থা মামলা করার হুমকি দিয়েছিল। ডালুবাবু বলেন, "বছর দেড়েক আগেকার কথা। মামলার হুমকি দিয়েছিল কি না, এখন মনে করতে পারছি না। তবে আমাকে বলা হয়েছিল, আমার চিঠির ফলে ওরা আঘাত পেয়েছে, ওদের কাজকর্মের ক্ষতি হচ্ছে।" এক তদন্তকারীর কথায়, "সারদা সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন যে সঞ্চয়নী সংস্থার ভূদেব সেনের পুত্র নন, এটুকু জানিয়ে চিঠি দিলেই আর মামলার ভয় থাকত না। কিন্তু ডালুবাবু সারদা সংস্থার প্রশংসা করতে গেলেন কেন? পরের চিঠিতে তিনি সারদা সংস্থার তদানীন্তন গ্রুপ মিডিয়া সিইও-র দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেন, কিন্তু সংস্থার নাম উল্লেখ করেননি।" ওই চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন, 'পশ্চিমবঙ্গে অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের কাছ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পাচ্ছে এবং গরিব মানুষকে ঠকিয়ে ওই সংস্থাগুলির তোলা কোটি কোটি টাকা তৃণমূলের তহবিলে ঢুকছে।' ওই চিঠিতে উল্লেখ ছিল, 'রাজ্যসভার এক তৃণমূল সাংসদ (যিনি সম্প্রতি নির্বাচিত হয়েছেন এবং পেশায় সাংবাদিক) রাজ্যের শাসক দল এবং অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির মধ্যে প্রধান মধ্যস্থাকারীর ভূমিকা নিচ্ছেন।' 
কংগ্রেস হাইকম্যান্ড ও প্রদেশ নেতৃত্ব এখনও ডালুবাবুর পাশেই। পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত দলীয় নেতা শাকিল আহমেদ এ দিন বলেন, "ডালুবাবু যে ভাবে গোটা বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে তদন্তে যদি তাঁর বিরুদ্ধে কিছু উঠে আসে, দল তখন সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে।" প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, "ডালুবাবু আমাকে জানিয়েছেন, পুরোপুরি ভুল বুঝে ও চাপে পড়ে গিয়ে তিনি সারদা সংস্থার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।" আর এক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও বলেন, "ডালুদা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিছু করেননি। কখনও কখনও আমরা অন্য কারও উপর বড্ড বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাই। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। তবে ডালুদার অনেক বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।"

পুরনো খবর: 
http://www.anandabazar.com/6uttar1.html

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...