BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Thursday, June 27, 2013

মানুষের সীমাহীন লোভে মুছে গেল মর্ত্যের নন্দনকানন

মানুষের সীমাহীন লোভে মুছে গেল মর্ত্যের নন্দনকানন

মানুষের সীমাহীন লোভে মুছে গেল মর্ত্যের নন্দনকানন
হিমাংশু তালুকদার

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হিমালয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ধ্বংস আর বিপর্যয়ের ছবি দেখে আঁতকে উঠছি৷ স্বর্গের নন্দনকাননে নাকি চির বসন্ত৷ মর্ত্যলোকের হিমালয়েও আছে এমন শতশত নন্দনকানন৷ প্রকৃতির কৃপায় সেখানে আছে বসন্ত ছাড়াও শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা৷ একঘেয়ে বসন্ত দেবতাদের ভালো লাগে কি না জানি না, কিন্ত্ত মর্ত্যের মানুষের কাছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এই হিমালয় অনন্য৷

আছে দুর্ঘটনা৷ ধস, ট্রেকিংয়ে মৃত্যু৷ এত প্রতিকূলতা আছে বলেই তো হিমালয়ের আর্কষণ অপ্রতিরোধ্য৷ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ৬০ উত্তীর্ণ বয়সেও আমি কুমায়ুন, গাড়োয়াল, হিমাচল, কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হেঁটে বেড়িয়েছি৷ এই আশি বছরের প্রাক্কালে হিমালয়ের সেই রূপ মনের পর্দায় ভেসে ওঠে আজও৷ বদ্রীনাথ যাওয়ার দু'টি পথ আছে৷ একটি কুমায়ুনের নৈনিতাল থেকে বেরিয়ে রানিখেত, আলমোড়া, কৌশানি, গোয়ালদাম, থরালি, নারায়ণগড়, সিমলি হয়ে কর্ণপ্রয়াগ৷ অন্যটি গাড়োয়ালের প্রান্তে হরিদ্বার থেকে হৃষিকেশ, দেবপ্রয়াগ, শ্রীনগর, রুদ্রপ্রয়াগ হয়ে কর্ণপ্রয়াগ৷ অতঃপর পথ একটাই৷ সিধে নন্দপ্রয়াগ, চামলি, পিপলকোঠি, গরুড়গঙ্গা, হেলং, যোশীমঠ, গোবিন্দঘাট, হনুমানচটি, বদ্রীনাথ৷ আমি নৈনিতাল রুটে কৌশানি থেকে ২০ জুন ১৯৯৫, বদ্রীনাথের পথে হাঁটা ধরেছিলাম৷ দীর্ঘপথে কত জনপদ৷ স্থানীয় একজন মানুষকেও অসত্ আচরণ করতে দেখিনি৷ নোলি গ্রামে রাস্তার পাশে পাহাড়ি ছেলে চণ্ডীপ্রসাদের চায়ের দোকান৷ বাড়ি থেকে আনা তার দুপুরের খাবার অবলীলায় সে আমাকে দিয়েছিল৷ নারায়ণগড়ের প্রেমসিং নেগি থাকার আশ্রয় জুটিয়ে দিয়েছিল৷ কর্ণপ্রয়াগে পাহাড়ের শীর্ষদেশে কালিকম্বলির প্রাচীন ধর্মশালা৷ সেখানকার চৌকিদার আমাকে পরম আদরে স্থান দিয়েছিল৷ সাম্প্রতিক বির্পযয়ে কুমায়ুন , গাড়োয়ালে শুধু বহিরাগতই নয় , স্থানীয় মানুষদের দুর্গতির কথা ভেবে মন খারাপ লাগছে৷ তবে কুমায়ুনে বৃক্ষের প্রাচুর্যই ভঙ্গুর পাহাড়গুলিকে ধসের হাত থেকে রক্ষা করে৷ এই সুরক্ষা গাড়োয়ালে অনেক কম৷ তা ছাড়া গাড়োয়ালে মানুষের অত্যাচার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে৷ অনেক নরম পাহাড় , তাতে ডিনামাইটের আঘাত৷ অজস্র রাস্তা তৈরি হয়ে পাহাড়গুলির ভিত নড়ে গেছে৷ গঙ্গোত্রী পথে তিহরি পৌঁছে গঙ্গার অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম৷ সেখানে ড্যাম হবে৷ গঙ্গাকে ঘাড় ধরে ঘুরিয়ে কয়েকটা টানেলের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তার গতিপথ শুকনো৷ আর কত ধর্ষিতা হবে ভাগীরথী, অলকানন্দা, মন্দাকিনী? এ সব ভূতত্ত্ববিদ কিংবা নদী বিশেষজ্ঞরা ভালো বলতে পারবেন৷ আমি ভাবছি, আমার দেখা সেই স্বর্গপথগুলি৷ গোবিন্দঘাট, পাণ্ডুকেশ্বর, যোশীমঠের নৃসিংহদেবের মন্দির থেকে নেমে যাওয়া বিষ্ণুপ্রয়াগে অলকানন্দা আর বিষ্ণুগঙ্গার সঙ্গমের পথ৷ হেলং থেকে কম্বলেশ্বর পথে ভর্গম, গঙ্গোত্রী পথে হরশিল, চোপতা থেকে তুঙ্গনাথের পথ, অমরনাথ পথের শেষনাগ থেকে পঞ্চতরণীর পথ, গৌরীকুণ্ড থেকে কেদারনাথের পথ৷

গোবিন্দঘাটে শিখ সম্প্রদায়ের বিশাল ধর্মশালা৷ পাশেই খরস্রোতা অলকানন্দা৷ এখানে শিখ পুণ্যার্থীরা জমায়েত হন৷ তার পর গুরু গোবিন্দ সিংয়ের তপস্থল হেমকুণ্ড৷ কাছেই ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স৷ সেবার হেঁটে বদ্রীনাথ যাচ্ছি৷ ঊষালগ্নে হাঁটা ধরলাম অলকানন্দার তীর ধরে৷ এপারে পাহাড় , ওপারে পাহাড়৷ মাঝে অলকানন্দা৷ আকাশ রাঙিয়ে সূর্য উঠল৷ পাহাড়েরা প্রণতি জানাল৷ অলকানন্দা উসিত৷ পাণ্ডুকেশ্বর এসে গেলাম৷ পঞ্চবদ্রীর অন্যতম যোগবদ্রীর মন্দির৷ ভোরের আরতি হচ্ছে৷ এ পথটা মনে গেঁথে রইল৷ হেলং থেকে কল্পেশ্বরের পথে এখন অনেকটা জিপে যাওয়া যায়, তখন হাঁটাপথে ১০ কিলোমিটার৷ পাশে কল্পগঙ্গা৷ নীচে বিস্তৃত উপত্যকার দিকে তাকিয়ে 'হাঁ' হয়ে যাবেন৷ উপত্যকা জুড়ে নানা রঙে চিত্রিত বিশাল কার্পেট পাতা৷ আসলে রামদানার ক্ষেত৷ সুখী পাহাড় পার হয়ে আপনি হরশিলের পথে হাঁটচ্ছেন৷ সঙ্গে রয়েছে গঙ্গা৷ হরশিল জনপদে পৌঁছে আপনি মর্ত্যে আছেন না স্বর্গে-- তা ভুলে যাবেন৷ গিরিরাজ হিমালয় এই জনপদটি জামাতা শিবকে উপহার দিয়েছিলেন৷ এ বার কেদারের পথ৷ ইদানীং পথের অনেক উন্নতি হয়েছিল৷ রেলিং, রাতে আলো , দিনরাত লোক চলাচল৷ ডাইনে নীচে মন্দাকিনী৷ বাঁয়ে সবুজ পাহাড়ের গা ঘেঁষে রাস্তা৷ মন্দাকিনীর ওপারে সারবদ্ধ পাহাড়শ্রেণি৷ একেবারে মন্দির পর্যন্ত--এই পাহাড়েরা সমদূরত্বে , সমউচ্চতায় যেন সব শিবমন্দির৷ আমি তিনবার কেদার দর্শন করেছি৷ গ্রীষ্মে , বর্ষায় ও হেমন্তে৷ তিন ঋতুতে এই পথটার তিন রূপ৷ সবচেয়ে সুন্দর বর্ষায়৷ বর্ষায় প্রতিটি পাহাড়ের চড়া থেকে জলধারা নেমে এসে পড়ছে মন্দাকিনীতে৷ মনে পড়ে যায় শিবের জটা থেকে গঙ্গা -অবতরণের কথা৷ শেষপ্রান্তে কেদারনাথের মন্দির৷ পিছনে উত্তুঙ্গ কেদার পর্বত৷ চিরতুষারে আবৃত শৃঙ্গ থেকে মন্দাকিনী নেমে আসছে৷ ভাবতে পারি না , কুমায়ুন -গাড়োয়ালের সেই স্বর্গপথগুলি , সেই মানুষগুলি আজ হারিয়ে গেছে৷ রুদ্রপ্রয়াগের রুদ্রনাথ , কেদারে কেদারনাথ , বদ্রীতে বদ্রীনাথ , এঁরা মিলিত ভাবে এত কুপিত হলেন ? এ কি শুধু প্রকৃতির রোষ ? নাকি মানুষের অজ্ঞতার প্রতিফল ? কে জানে৷

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...