BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE 7

Published on 10 Mar 2013 ALL INDIA BAMCEF UNIFICATION CONFERENCE HELD AT Dr.B. R. AMBEDKAR BHAVAN,DADAR,MUMBAI ON 2ND AND 3RD MARCH 2013. Mr.PALASH BISWAS (JOURNALIST -KOLKATA) DELIVERING HER SPEECH. http://www.youtube.com/watch?v=oLL-n6MrcoM http://youtu.be/oLL-n6MrcoM

Welcome

Website counter
website hit counter
website hit counters

Monday, December 14, 2015

সুরমা গাঙর পানি,দেশভাগ এবং পরের দশকের কাছাড় সিলেটের প্রেক্ষাপটে রণবীর পুরকায়স্থের এই উপন্যাস ঈশানে এই উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে আসছে। আজ তার চতুর্দশ অধ্যায় ---সুব্রতা মজুমদার।)

সুরমা গাঙর পানি-- ভাটি পর্ব ১৪

সুরমা গাঙর পানি-- ভাটি পর্ব ১৪



চৌদ্দ


(দেশভাগ এবং পরের দশকের কাছাড় সিলেটের প্রেক্ষাপটে রণবীর পুরকায়স্থের এই উপন্যাস ছেপে বের করেছে দিন হলো। ভালো লাগা এই  উপন্যাস পুরোটা টাইপ করে তুলে আমার প্রিয় কথা শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম। আশা করছি আপনাদের সবার এটি পড়তে ভালো লাগবে। সম্পূর্ণ উপন্যাসের সংলাপ ভাগটি সিলেটিতে -সে সম্ভবত এই উপন্যাসের সবচাইতে আকর্ষণীয় দিক। আপনাদের পড়বার সুবিধে করে দিতে, ঈশানে এই উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে আসছে। আজ তার চতুর্দশ  অধ্যায় ---সুব্রতা মজুমদার।)

   
           মানুষে বিশ্বাসী বৈতলের গুরুর ভালমানুষী ছাড়া কোনও পার্থিব সম্পদ নেই । এক বাস্তুভিটে পঞ্চপুষ্পের পাচকন্যা , তাদের জননী আর ভুল বিশ্বাসের শিষ্য বৈতল, এই মাত্র রোজগার । পরিশ্রমের অন্নে কোনও রকমে গ্রাসাচ্ছাদন হয় বটে । সঞ্চয় শূন্য । শুধু শ্রাবণ মাসে যা কয়েকটাকা আলাদা রোজগার । সেই আয়ের ভাগ সৃষ্টিধরের পরিবার পায় না । লুকিয়ে রাখে ওঝা । শুধু বৈতল জানে । বৈতলকে বলেন , 
--- আইর ঘড়াত রাখছি, আস্তিক মুনিয়ে পারা দেইন ।
    ওঝার ভাণ্ডারে কখনও দৃষ্টি দেয় নি বৈতল । বৈতল জানে গুরুকে বললেই দিয়ে দেবে সর্বস্ব । আর মানুষটার ঝাঁপিতে তো মাত্র এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানোর রাহাখরচ , পা গাড়ির তো কোনো ভাড়াই নেই । তাও লুকনো দুচার পয়সা সঞ্চয় নিয়ে সংশয় যায় না । বলেন ,
--- মনসামঙ্গল গাইয়া , নাচিয়া যে মাইনষর কাছ থাকি পয়সা নেই, ইতা কুনু ঠিক নি । আমি ঠগাইয়ার নি তারারে । ধর্মকথা শুনাইয়া দাম নেওয়া পাপ না নি বা ।
--- আপনে নু কইন মনসামঙ্গল ধর্মবই নায় ।
--- নায় তো । গরিব মানুষর কথা আছে । ভালায় মন্দে মিশাইল মাইনষর কথা । বেউলা যে গেলা নদী দিয়া , তার ঘাটো ঘাটো কত কিছিমর মানুষ , কেউ ভালা কেউ বদ । বদ মানুষ ভালাও তো অইল । হিন্দু মুসলমানর মিলর কথাও আছে । হক্কলতা তো পড়তাম পারি না , নাইলে দেখলায় নে । অত ঘুসা বেটির কিন্তু বেটিয়ে সবরে এক করি রাখে । বাংলার সবখানোউ তো মনসা পূজা হয় । কিন্তু কুনুখানো মা বেটিরে ইলাখান পুড়ির মতো ডরাইন না । এর লাগিউ তুমারে কই সিলেটর লাখান দেশ পাইতায় নায় । ইখান ছাড়ি যাইও না ।
    কী কথায় কী কথা । গুরুর মনে সন্দেহ কখন থেকেই । পড়াশুনা জানা মানুষ অনেক আগে থেকেই সব জানতে পারে । দেশভাগ যে হতে পারে , দেশভাগ যে অবশ্যম্ভাবী , সৃষ্টিধর ওঝা জেনেছিলেন অনেক আগেই । তাই সব তছনছ হওয়ার ভয় তাঁর মনে । তাই সিলেটের গুণবর্ণনায় প্রিয় শিষ্যকে অবাক করে দেন যখন তখন । বৈতলকে অনুপ্রাণিত করে বলেন ,
--- যাইতায় নি বাবা একখানো ।
   গুরুর অনুরোধকে আদেশ মেনে বৈতল প্রস্তুত হয় তৎক্ষণাৎ । বলে,
--- কই যাইতা ।
--- যাইমুনে একখানো । যেখানো বউত বড় বড় মাইনষর পাড়া পড়ছে । অউ যে নদিয়ার চান্দ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু , তান বাপর বাড়ি কই জানো নি । চল যাই ধারঅউ ঢাকা দক্ষিণ । দেখিয়া আই শচি রানীর গিরিস্তি । জগন্নথ মিশ্রর বাড়ি ।
   ওস্তাদের মতো শিষ্য হাঁটতে পারে লম্বা লম্বা পা ফেলে । দিঘীরপার থেকে ভোরের বেলা রওয়ানা হয়ে সূর্যের তেজ বাড়ার আগেই পৌঁছে গেছে গন্তব্যে । পথে যেতে যেতে গুরুই শুধু কথা বলে গেছেন । সব মহাপ্রভুর লীলা প্রসঙ্গ । বলেছেন ,
--- মহাপ্রভু আইছলা 'পিতৃজন্মস্থান'
     'কিছুদিন থাকি প্রভু ভাবিলা মনেতে
       যাইতে হইল মোর শ্রীহট্ট দেশেতে ।'   
    আমরার তরফর বাবন , বুঝছ নি বা , বিশ্বব্রহ্মাণ্ড গ্রহনক্ষত্র নিয়া মাস্টারি করতা এক পণ্ডিতে , নাম নীলাম্বর চক্রবর্তী । বিশ্বম্ভর মিশ্রর দাদু । বিশ্বম্ভর কে  জানো নি । নিমাই পণ্ডিতর নাম । একদিন খুব গুসা করিয়া নবদ্বীপো কাজির বাড়ি চড়াও অইছইন নিমাই শ্রী চৈতন্য । খুব গুণ্ডা প্রকৃতির আছলা তাইন । তখন কাজিয়ে তানে কেমনে ঠাণ্ডা করইন হুনো । কাজিয়ে কইন,
'গ্রাম সম্পর্কে চক্রবর্তী হয় মোর চাচা
দেহ সম্মন্ধ হইতে হয় গ্রাম সন্মন্ধ সাঁচা
নীলাম্বর চক্রবর্তী হয় তোমার নানা
সে সন্মন্ধে হও তুমি আমার ভাগিনা ।'
আর কিতা, গুসা পানি । মামা ভাইগনা যেখানো, আপদ নাই হিখানো ।
      খেপা মানুষের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে সব সময় ভালও লাগে না । সব সময় এক কথা, মানুষে মানুষে মিল , ভালবাসার গল্প । গুরু সৃষ্টিধর তো নিজেকে বলেন সৃষ্টিছাড়া, স্বীকার করেন নিজের পাগলামির কথা । বলেন,
--- আমার কানুছাড়া গীত নাই । মিলমিলাপ ছাড়া মাত নাই । কেনে করতাম না কও চাইন । খামোকা খামোকা কেনে অউ মারামারি, খাকরা খাকরি । ইগুয়ে ইতা খায়, তে হিগুয়ে হিতা খায় না । ইগুয়ে বলি দেয় । তে হিগুয়ে পুছ দেয় । ইগুয়ে চুটকি রাখি ডর দেখায়, হিগুয়ে দাড়ির উপরে মুছ কাটিয়া ধমকায় । অখন অইচে আর একতা, ধুতি পিনতা নায় বাঙালে ।
      গুরু মেনেছে যাঁকে, তাঁর পাগলামিও মানতে হয় । তবু প্রশ্ন করে বৈতল ,
--- ইতা করিয়া কিচ্ছু অয় নি কইন । আমার বন্ধু লুলা আমারে ছাড়িয়া গেল গিয়া । আমি তো ভুলতাম পারি না । দিনো একবার অইলেও মনো পড়ে । হেও তো অলা নিমক হারাম ।
--- বন্ধু অইলে আইব বাবা । দেখিও । আর হে কুনু মুসলমান নি, হে তো তুমার বন্ধু। বন্ধুর কুনু জাত ধর্ম নাই রেবা 
--- বুঝলাম, লুলার কথা আলাদা । কিন্তু হউ তো রায়ট হয় ।
--- না রেবা বাপধন, হক্কলতাত গুসা করলে অইব নি । রায়ট অইল বানর পানি । আয়, আবার যায় গিয়া । কোন সময় আইব, কেউরে কইয়া আয়না । আর বছরে বছরে কুনু হয় নি । একটু উচা বান্ধ বান্দলে, রাস্তা ঘাট উচা করলে, ভিটা উচা করলে পানির হাত থাকি বাচা যায় ।
   মনে গেঁথেছিল বৈতলের । তবু সংশয়, তবু প্রশ্ন । বলে,
--- নারায়ে তকবির শুনলে ইতা মনো থাকে না । গা জ্বলি যায় ।
--- ঠিক কইছ । একলা একলা মানুষ বড় বালা । শান্তির সময় ভালা । তে আর পরীক্ষা কিওর । কঠিন সময়ো অইল আসল পরীক্ষা । রায়ট আইলে আমারও মনে লয় সব বাঙাল মারি ফালাই দেই । এমনে তো ডরালুকর পাদরাপুক , রায়ট আইলে তাউক বাড়ি যায় । এরলাগিউ আমরা মানুষ । গুসা আইব গুসা কমানি লাগব । ভালা কথা কইলে ভালা কথা হুনলে ইতা কমে । আইচ্ছা কওছাইন একখান কথা । পারবায় নি দেশ থাকি সব মুসলমান খেদাইতায় । পারলে খেদাই দেও , আমিও মারমুনে এক ধাক্কা । আর চাচা হকলে পারবা নি হিন্দু খেদাইতা । আর মাইনষে কইন মুসলমানে দেশ মানইন না , তারা দেশ ভাবইন আরব । মক্কা আর মদিনা । তে কিতা অইল , আমরা সিলেটি হিন্দু , মরলে ইখানোউ পুড়ানি হয় , কুশিয়ারার পারো নাইলে সুরমার পারো । তে অস্থি লইয়া কেনে যাই গঙ্গাত , কেনে যাই গয়াত । ধর্ম করার লাগি যাই কাশী বৃন্দাবন । আমরাও তো, দেশরে দেশ মানি না । অইল নানি । ইতা সব খামোকা মাত । মুসলমানর মাঝেও তুমার হিন্দু থাকি বউত বড় বড় মানুষ আছইন । তারা দেশ মানইন সিলেটরে । ইতিহাস মানইন , গর গোবিন্দরেও মানইন শাহজালালরেও মানইন । ইদেশর ধর্মকর্ম সব মানইন । একখান গান গাই শোন ।
    কথাপাগল বৈতলগুরু কথার মাঝখানে গান ধরেন মধুর কণ্ঠে ,
'মধুপুর গেলা হরি না আসিলা আর
হইল গোকুল অন্ধকার হায় হায় হায় । '
     গুরুর গান শুনলে বৈতলের দশবার রইদপুয়ানির পুকুরে অবগাহন হয়ে যায় । কিন্তু গুরু দীর্ঘায়ত করেন না গান । নিশ্চয় কোনও ধাঁধা আছে , প্রশ্ন আছে, সমাধান আছে অবাক করা । গুরুকে যে পথে বেরোলে কথায় পায় । কথকতার অমূল্য আধার এই অখ্যাত গ্রামের মনসাগানের গায়ক । গান যে মুখ্য নয় সে বোঝে বৈতল , তাক লাগানো তথ্যে সত্যি অবাক হয় । গুরু বলেন ,
--- কুনু হিন্দুর লেখা নায় বাবা । মুনিরুদ্দিনর লেখা , সিলেটর এক মুসলমান সাধক । দৈ খাইতা খুব । এর লাগি নাম দৈখোরা পাগল । আমারো মনোলয় ই সৃষ্টিধর নামর বোঝা লামাইয়া সিষ্টিছাড়া হইয়া খালি গান গাই ,
' দৈ খোরা পাগলে বলে আল্লার নাম সার
মিছা ভবের বাজার হায় হায় হায়
কি জবাব দিবায় মনা কবর হাসরে ?'

--
Pl see my blogs;


Feel free -- and I request you -- to forward this newsletter to your lists and friends!

No comments:

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...